জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য করানো হয়েছে বলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ তিন সাক্ষী।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে বুধবার এই অভিযোগ করেন তারা।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।
শেখ হাসিনা ছাড়াও অভিযোগে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি একেএম আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমানসহ ৪০ জন।
আলতাফ হাওলাদার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা হয়তো বলতে পারেন যে এখন আসছেন কেন? আমাদের বয়স হয়েছে, এক পা কবরে... সাঈদী সাহেবের মতো একজন আলেমের বিরুদ্ধে আমাদের দিয়ে যেসব কাজবাজ করানো হয়েছে, সেগুলো এখন আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। আমাদের আত্মীয়-স্বজন যারা আছে, পাড়া প্রতিবেশী, দেশবাসী, সবাই আমাদের ঘৃণা করে। ঘৃণার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছি। এখন শেষ বয়সে যদি দেশের কাছে জাতির কাছে সবার সামনে বিষয়টা বলতে পারি যে, সাঈদী সাহেব ভালো লোক ছিলেন, তার বিরুদ্ধে যে কাজটা আমাদের দিয়ে করানো হয়েছে সেটা হুমকি দিয়ে, অস্ত্র-পিস্তল ঠেকিয়ে করিয়েছে। লিখে দিয়েছে বলার জন্য, যখন পড়তে পারি না আমাদের গালাগালি করেছে, পরে অনেকদিন রেখে এসব পড়িয়েছে, শিখিয়েছে।
অভিযোগকারীদের পক্ষে আইনজীবী পারভেজ বলেন, ২০০৯ সালে মাহবুবুলকে ডেকে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেন এমপি আউয়াল। তবে রাজি না হওয়ায় তাকে তৎকালীন পিপি কার্যালয়ে তুলে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এরপর দীর্ঘ নির্যাতনের এক পর্যায়ে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে সাঈদীর নামে মিথ্যা মামলা দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেন। তখনো তাকে যাত্রাবাড়ী থানার অধীনে কথিত সেইফ হোমে এনে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগকারী বাকি দুই সাক্ষীরও একই জবানবন্দি নেন তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম।
এর আগে গত ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি। তিনি সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুমসহ নির্যাতনের অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে পরিচালিত বিচার কার্যক্রম নিয়ে আসামি ও তাদের স্বজনসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার প্রশ্ন তুললেও তখন আমলে নেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ আমলে প্রশ্নবিদ্ধ বিচারিক কার্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগকরাকালে কারা হেফাজতে ২০২৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন ধর্মীয় বক্তা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
এনডি/এইচএ/