ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

আইন ও আদালত

মামলা বাতিল চেয়েছেন বিচারপতি খায়রুল হক, হাইকোর্টে হট্টগোল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪০, আগস্ট ১১, ২০২৫
মামলা বাতিল চেয়েছেন বিচারপতি খায়রুল হক, হাইকোর্টে হট্টগোল

জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলা বাতিল ও জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। একইসঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

গত ৭ আগস্ট দাখিল করা আবেদনটি সোমবার (১১ আগস্ট) বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার হাইকোর্ট বেঞ্চে ১৮ নম্বর ক্রমিকে ছিল। এ আবেদনটিতে খায়রুল হকের পক্ষে শুনানি করতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষ সময় আবেদন করে। তখন দুই পক্ষে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে বলেও উপস্থিত আইনজীবীরা জানিয়েছেন। পরে আদালত শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন রেখেছেন।  

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহমেদ। বিচারপতি খায়রুল হকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, কামরুল হক সিদ্দিকী, জেড আই খান পান্না, মহসিন রশিদ, আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন ও মো. সেলিম।  

কোর্ট থেকে বেরিয়ে আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, আড়াইটার পরে মোশনটা (আবেদন) যখন ধরলো তারা (রাষ্ট্রপক্ষ) তখন সময় চাইলো। কোর্ট তিনটা পর্যন্ত সময় দিলেন। বিকেল ৩টার সময় যখন শুনানির জন্য আসলো আমি তখন দাঁড়ালাম। তখন তারা আবার বললো অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চেয়েছেন। আরও ১০ মিনিট অপেক্ষার পরে বললেন যে অ্যাটর্নি জেনারেল নট দিস উইক (শুনানি এ সপ্তাহে নয়) নিতে বলেছেন। তখন একটা অল্টারকেশন হয়েছে। আচরণটা ভালো করেনি। আইন কর্মকর্তারা তাদের ক্ষোভ (খায়রুল হক সাহেব অতীতে কি করেছেন সে বিষয়ে) প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত আগামী রোববার ১১টার সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত।  

মামলাটির বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে চলতি বছরের ৬ জুলাই। খায়রুল হক সাহেবের তো এখানে কিছু নেই। তিনি তখন আইন কমিশনের চেয়ার‌ম্যান। ওনাকে ৪৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদৌ কোনো এভিডেন্স নেই।

আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আইন শৃঙ্খলার ভেতরে নেই এটুকু বুঝলাম।

আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আমাদের আবেদন ছিল মামলা বাতিল চেয়ে। .... আইনজীবী বন্ধুরা কোর্টের ভেতরে একজন আরেকজনের ওপর আক্রমণাত্মক হবে এটাতো আদালতের ভাষাও না আদালতের ব্যবহারও না। আদালতকে ডিকটেড করবে এটা অপ্রত্যাশিত।  

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহমেদ বলেন, আমাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল এক সপ্তাহ সময় নেওয়ার জন্য। আমরা কোর্টের কাছে আবেদন করেছি। অ্যাটর্নি জেনারেলের জন্য সময় চেয়েছিলাম। ওনারা (খায়রুল হকের পক্ষের আইনজীবী) ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের কথা শুনতে চাচ্ছিল না। জোর করে সাবমিশন রাখতে চেয়েছিল। পেছন থেকে অনেকে হই হুল্লোড় শুরু করে যে, কেন শুনানি হবে না।

‘আমাদের একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তখন তাদের উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, যখন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তখন তো এ রকম মায়াকান্না করেননি। ’  

গত ২৪ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে এ মামলা ছাড়াও আরও তিনটি মামলা রয়েছে। একটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত রায় জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৭ আগস্ট শাহবাগ থানায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীনের মামলা। ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া। এছাড়া প্লট দুর্নীতির অভিযোগে দুদকও একটি মামলা করেছে।  

২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান খায়রুল হক। একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হয়। ২০১১ সালের ১৭ মে তিনি অবসরে যান। এরপর তিনি আইন কমিশনের তিনবার চেয়ারম্যান হন।

ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।