ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ জুলাই ২০২৫, ২৮ মহররম ১৪৪৭

আইন ও আদালত

ভেবেছিলাম ওয়ান-ইলেভেনের মতো ট্রুথ কমিশন হবে: আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০৯, জুলাই ২৩, ২০২৫
ভেবেছিলাম ওয়ান-ইলেভেনের মতো ট্রুথ কমিশন হবে: আদালত ফাইল ছবি

ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন গালিব বলেছেন, বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ট্রুথ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। যারা দুর্নীতি করেছিলেন তারা ওই কমিশনে গিয়ে নিজেদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেন।

ভেবেছিলাম এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও এমন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাচার করা টাকা এই সরকার ফেরত এনে রাষ্ট্রের কাছে জমা দেবে, কিন্তু সেটি হয়নি।

বুধবার (২৩ জুলাই) দুদকের করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের জামিন শুনানিকালে এ মন্তব্য করেন আদালত।

ভুয়া কোম্পানির নামে পরস্পর যোগসাজশে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় এদিন আবুল বারকাতের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়।

জামিন শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের ঋণ আবেদন করে এননটেক্স গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সুপ্রভা স্পিনিং মিলস। পরে তাদের আবেদনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন মেনে সুপ্রভা স্পিনিং মিলসকে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এখানে ড. আবুল বারকাত দায়িত্বে কোনো অবহেলা করেননি। তিনি কোনো নীতিমালাও ভঙ্গ করেননি।

তিনি আরও বলেন, এর আগে একই বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করে কোনো দুর্নীতি হয়নি মর্মে ক্লিয়ারেন্স দেয়। এখন একই বিষয়ে নতুন করে মামলা করার বিষয়টি দ্বিচারিতা ছাড়া কিছুই না। তাই দুদক আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে যেসব এলিগেশন এনেছে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা তার (আবুল বারকাত) জামিন চাইছি।

জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার কর্মচারীরা কোনো অপরাধ বা অনিয়ম করলে তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। এক্ষেত্রে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাই আমরা জামিনের বিরোধিতা করছি।

শুনানির একপর্যায়ে আদালত কিছু মন্তব্য করেন। আদালত বলেন, সোনালী ব্যাংকের পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, পাঁচ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। এরপর থেকেই পাঁচ হাজার, দশ হাজার কোটি, বিশ হাজার কোটি, পঞ্চাশ হাজার ও এক লাখ কোটি টাকা লোপাট হতে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব টাকা পাচার হয়ে চলে যায় বিভিন্ন দেশে।

আদালত আরও বলেন, এখন দুদকের মতো সংস্থার পক্ষে এত এত দুর্নীতি বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না। এ ছাড়া দুদক যেসব মামলা করে সেসব মামলায় শাস্তিও হয় কম। দুর্নীতি করে পাঁচ হাজার কোটি টাকার শাস্তি হয় পাঁচ বছরের।

এরপর আবুল বারকাত ও দুদক প্রসিকিউটরকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, জনতা ব্যাংকের অভিযোগ আরও অনেক বড় থাকার কথা। তবে সব অভিযোগের সঙ্গেই আপনি জড়িত, এটি আমি বলছি না। আপনি ধৈর্য ধরেন। ব্যাংকের বোর্ডের সহায়তায় বিদেশে অর্থপাচার করছে, এটা নজিরবিহীন। আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।

এরপর আবুল বারকাতের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত।  

এ ছাড়াও মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার করা তিনদিনের রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য সিএমএম আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ১০ জুলাই ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসা থেকে আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।

অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি, মিথ্যা রেকর্ডপত্র সৃজনপূর্বক খাঁটি হিসেবে ব্যবহার, অপরাধজনক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃক মর্টগেজ নেওয়া জমিতে বাস্তবে কোনো ভবন/স্থাপনা/কারখানা না থাকা সত্ত্বেও ঋণগ্রহীতা মালিক হওয়ার পূর্বেই জমিতে স্থাপনা দেখিয়ে মূল্যায়ন করে। স্থাপনাবিহীন ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় ক্রয়কৃত জমিকে ১৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা মূল্যায়ন করে অন্যায়ভাবে বিআরপিডি সার্কুলার নং ০৫/২০০৫ এবং MoU এর অনুশাসন ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঋণ অনুমোদনপূর্বক বিতরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক লি. জনতা ভবন কর্পোরেট শাখা, ঢাকা'র ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

কেআই/এমজেএফ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।