ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের নয় মাস সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ছয় মাস সময় দেন বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর তদন্ত থেকে র্যাবকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
পরে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়।
টাস্কফোর্সের অন্য তিন সদস্য হলেন—পুলিশ সদর দপ্তর ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ থেকে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার একজন করে দুইজন এবং র্যাব থেকে পরিচালক পদমর্যাদার একজন।
তবে ৬ এপ্রিল উচ্চ আদালতে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় এ বিষয়ে তখন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তার ধারাবাহিকতায় ২১ এপ্রিল এটি আবার আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, কী পরিমাণ তদন্ত করা হয়েছে। কী অগ্রগতি আছে, এই মর্মে একটি আংশিক রিপোর্ট আমাদের দেখিয়েছেন (রাষ্ট্রপক্ষ)। কিন্তু যেহেতু আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, তদন্ত চলমান। এ জন্য সে রিপোর্টের কপিটি আইনিভাবে পাইনি। আদালতেও জমা না দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। তিনি (রাষ্ট্রপক্ষ) আদালতকেও এটি আশ্বস্ত করেছেন—তদন্ত চলছে, তদন্তের অগ্রগতি আছে। বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ডিএনএ টেস্টের জন্য অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। এগুলো আসার জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন। একজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। এর প্রেক্ষিতে নয় মাস সময় চাওয়া হয়েছে। আমরা তিন মাস সময়ের কথা বলেছিলাম। আদালত ছয় মাস সময় মঞ্জুর করেছেন। পরবর্তী ২২ অক্টোবর দিন রেখেছেন। আমরা আশা করব, এই সময়ের মধ্যে বা তার আগে তদন্ত শেষ হলে রিপোর্ট আদালতে দায়ের করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, রহস্য উন্মোচনের জন্য ওনারা মনে করছেন আরও সময় প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, তারা খুব আন্তরিক। বসে নাই। ১২ বছর আগের ঘটনা হওয়ার কারণে অনেক কিছু হারিয়ে (ডিসঅ্যাপিয়ার) গেছে। অনেক কিছু সিনে নাই। এ জন্য অধিকতর সময় প্রয়োজন। ডিএনএ টেস্ট আসতেও সময় প্রয়োজন। আমি মনে করি রাষ্ট্র আন্তরিক। রহস্য উন্মোচন এখনো করতে পারে নাই।
‘রাষ্ট্রপক্ষ বলার চেষ্টা করেছে—অনেক কিছু ডিসঅ্যাপিয়ার হয়ে গেছে। অনেক দিনের আগের নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিসপ্লেস হয়ে গেছে’, বলেন এই আইনজীবী।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। একই সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।
দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।
এদিকে এ মামলার বাদী পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর আইনজীবী শিশির মনিরকে নিযুক্ত করা হয়।
২০১২ সালে হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে জনস্বার্থে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সেই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা রুলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এরপর পৃথক একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত র্যাবের কাছে চলে যায়। তবে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর রিট মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। এরপর আদালত টাস্কফোর্স গঠন করে আদেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
ইএস/এমজেএফ