ঢাকা: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া সাত হাজার ১৮৪টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ৫০ হাজার থেকে এক লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য এসেছে বলেও তিনি জানান।
রোববার (১৩ এপ্রিল) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সংসদ সম্মেলনে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক সাত হাজার ১৮৪টি মামলা আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। একটা মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে অনেক কাগজপত্র প্রত্যাহার করতে হয়। অনেক সময় এমন মামলা আছে, যেগুলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক নয়। অনেকে অনেকভাবে নাম ঢুকিয়ে দেয়। প্রতিনিয়ত আমাদের আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন। তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছেন। এর চেয়ে দ্রুত কাজ করা সম্ভব কিনা আমার জানা নেই। এরপরও আমরা আরও কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে এটাকে আরও দ্রুততর করার চেষ্টা করছি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য এসেছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সরকারের মেয়াদের মধ্যে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
ঢালাও জামিনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইন উপদেষ্টা বলেন, জামিন হলে খালি বলা হয় আইন মন্ত্রণালয় কি করছে বা আসিফ নজরুল কি করছে! সাংবাদিকদের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে জানাচ্ছি যে প্লিজ আপনারা বিনীতভাবে বোঝার চেষ্টা করলে আমি খুব খুশি হবো। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী বিভিন্ন মামলায় যে জামিন হয়েছে, আমরা সেগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছি প্রায় সব মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন দেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন হাইকোর্ট সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা বা মন্তব্য করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আগাম জামিন প্রদান করার পর হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী জামিনপ্রাপ্তরা কেবল অধস্তন আদালতে বেইল বন্ড দাখিল করেন।
‘এক্ষেত্রে অধস্তন আদালত যে কাজটি করেছে সেটি হলো, আগাম জামিনের মেয়াদ যখন শেষ হয় পুনরায় জামিন চাইতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই আবেদনটাকে খারিজ করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অধঃস্তন আদালত থেকেও জামিন হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা জামিন পেয়েছেন, তারা এফআইআর বা এজহারভুক্ত আসামি নন।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা আগের আমলে জামিন পেয়েছিল, এখন বেইলবন্ড নিয়ে বের হয়ে গেছে। অধিকাংশ জামিন হাইকোর্ট থেকে হয়েছে। এই জামিনগুলোর অনেকগুলো আপিল বিভাগে বাতিল হয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে কিছু কিছু জামিন হয়েছে, এটা শোনার পর আমরা হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করার চেষ্টা করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বের হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা যায়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রেফতার করা গেছে। আপনাদের সঙ্গে আমি একমত, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের জামিন আমাদের আরেকটু গভীরভাবে বিবেচনা করে দেওয়া উচিত। আলোচিত অনেকের জামিন হলেও পরবর্তীতে আপিলে তা বাতিল হয়েছে। এই যে এত জামিন দেওয়া হচ্ছে ৷ এই ব্যাপারটা প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগ আবগত আছেন। আমার ধারণা এ বিষয়ে উপযুক্ত করণীয়, ওনারা আমাদের থেকে ভালো বুঝেন, উনারা ব্যবস্থা নেবেন।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে আসিফ নজরুল বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বা অন্যান্য নিবর্তনমূলক আইনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বিচার বিভাগীয় যে সংস্কার কমিশন আছে তাদের প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছি। আপনারা জানেন রাজনৈতিক ঐক্যমত কমিশনে আলাপ হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক ঐক্যমতের দিকে যাচ্ছি।
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা প্রবাসীদের অধিকার। এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। ১৫ বছর একটা সরকার ক্ষমতায় থেকে এটা করতে পারেনি। এটা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারাধীন বিষয়। তারা বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন- পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে দেওয়া যায় কি না, ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া যায় কি না, প্রক্সি ভোট দেওয়া যায় কি না। আমার মনে হচ্ছে তারা ডিটারমাইন্ড। তারা কোন না কোন প্রক্রিয়ায় সীমিতভাবে হলেও এটা করতে বদ্ধপরিকর। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই এটা তারা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
এসকে/এএটি