ঢাকা, রবিবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলা, প্রাণভয়ে পালাচ্ছে মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৪৮, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫
গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলা, প্রাণভয়ে পালাচ্ছে মানুষ গাজা সিটির ফিলিস্তিনিরা মধ্য গাজা উপত্যকার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে উপকূলীয় সড়ক দিয়ে দক্ষিণমুখী হচ্ছেন

দুই বছরের যুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ বোমাবর্ষণের মাধ্যমে গাজা সিটিকে ধ্বংস করছে ইসরায়েল, যাতে মানুষ বাধ্য হয়ে দক্ষিণে পালায়—এমনই কৌশল নিয়েছে দখলদার বাহিনী।

শুক্রবার পুরো গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলি অবরোধ ও কৃত্রিম দুর্ভিক্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪১ জনে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিখাই আদ্রাঈ শুক্রবার গাজা সিটির অবরুদ্ধ বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলেন, সেনারা ‘অভূতপূর্ব শক্তি’ ব্যবহার করবে। তিনি মানুষকে আহ্বান জানান, এই সুযোগে শত সহস্র মানুষের সঙ্গে যোগ দিয়ে দক্ষিণমুখী হতে। এখন কেবল উপকূলবর্তী আল-রাশিদ সড়কই পালানোর একমাত্র অনুমোদিত পথ।

ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, আগস্টের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি গাজা সিটি ছেড়েছেন। অন্যদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম শুক্রবার গাজা সিটি থেকে ‘হৃদয়বিদারক’ খবর জানান। উপকূলের দিকে ছুটে চলা মানুষরা অবিরাম হামলার কারণে কোথাও বিশ্রাম নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, “এই অভিযানে সম্পূর্ণ ব্লক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। টাল আল-হাওয়ায় অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো আটকা পড়ে আছে। ”

অনেকেই বাধ্য হয়ে গাজা ছাড়তে চান, কিন্তু দক্ষিণে আল-মাওয়াসি এলাকায় যেতে ট্রাক বা গাড়ি ভাড়া করার সামর্থ্য নেই। আবার ওই এলাকাও অতীতে ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে, যদিও সেটিকে তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

তবু শত শত পরিবার আল-মাওয়াসির উদ্দেশে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছে।

পঞ্চাশ বছর বয়সী নেভিন আহমেদ বৃহস্পতিবার সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে গাজা সিটি থেকে কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহ পর্যন্ত হেঁটে গেছেন। তিনি এএফপিকে বলেন, “আমরা ১৫ কিলোমিটারের বেশি হেঁটেছি, ক্লান্তিতে হামাগুড়ি দিতে হয়েছে। আমার ছোট ছেলে ক্লান্ত হয়ে কান্না করছিল। আমরা পালা করে একটি ছোট ঠেলাগাড়ি টেনেছি। ”

সর্বস্তরে ভয়াবহ সংকট

জাতিসংঘের হিসেবে আগস্ট শেষে গাজা সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ছিল। এর অর্ধেক হয়তো ইতোমধ্যেই পালিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাচ্ছে, মঙ্গলবার পর্যন্তও প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ এখনো গাজার উত্তরে রয়ে গেছে।

গাজা সিটিতে বাস্তুচ্যুত ওসামা আওয়াদ বলেন, টানা এক সপ্তাহ ধরে মানুষ ‘ভয়ের রাত’ কাটাচ্ছে। তিনি জানান, “বোমা ও গোলাবর্ষণ আরও কাছে চলে এসেছে। আকাশে এফ-১৬ উড়ছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে, সমুদ্র থেকেও গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। ”

শুক্রবার পুরো গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই ২৬ জন। টাল আল-হাওয়ায় এক আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজায় সহায়তার খোঁজে থাকা দুই ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এটি মৃত্যুর ও ধ্বংসের এমন এক স্তর, যা আমি মহাসচিব হিসেবে নয়, আমার জীবনে কখনো দেখিনি—দুর্ভিক্ষ, চিকিৎসার সম্পূর্ণ অভাব, অপ্রতুল আশ্রয়ে ঠাসাঠাসি করে মানুষ বসবাস করছে। ”

কেন্দ্রীয় গাজার আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের এক চিকিৎসক আল জাজিরাকে জানান, হাসপাতালে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত ৯ বছরের এক শিশু মারা গেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে এ পর্যন্ত ৪৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়ার তথ্য অনুযায়ী, টানা ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো জ্বালানি ঢোকেনি। অবশিষ্ট জ্বালানি সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা টিকবে। তার ভাষায়, এটি সব দিক থেকেই ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সূত্র: আল জাজিরা

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।