ঢাকা, রবিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিলেন নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০৪, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিলেন নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি জোহরান কোয়ামে মামদানি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের মনোনীত প্রার্থী জোহরান কোয়ামে মামদানি ঘোষণা করেছেন, তিনি জয় পেলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেবেন।  

জোহরান মামদানি বলেন, নেতানিয়াহু যদি নিউইয়র্ক শহরে ঢোকেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

এটি আমার এমন প্রতিশ্রুতি, যেটি আমি বাস্তবায়ন করতে চাই।

নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।  

কে এই জোহরান মামদানি
নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনের এই প্রার্থী নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য ও ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টদের একজন প্রভাবশালী নেতা। তার জন্ম উগান্ডায়, কিন্তু বেড়ে উঠেছেন নিউইয়র্ক সিটিতে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন। ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সঙ্গে অনশনে বসে তিনি পরিবর্তনশীল ঋণ মুক্তির জন্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি জোগাড় করেন। একই সঙ্গে রাজ্য বাজেটে বাড়তি সাবওয়ে সেবার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করেন এবং একটি সফল ভাড়া-মুক্ত বাস পাইলট প্রকল্পও চালু করতে সক্ষম হন। এছাড়া প্রস্তাবিত একটি দূষণকারী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ঠেকাতে স্থানীয় মানুষদের সংগঠিত করে বিজয় অর্জন করেন তিনি।

মামদানি মনে করেন, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান খরচ শ্রমজীবী মানুষদের কঠিন পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে। তবে তার বিশ্বাস, সরকার চাইলে খরচ কমানো সম্ভব এবং নগরবাসীর জীবন সহজতর করা যায়। নির্বাচিত হলে তিনি ভাড়া কমানো, বিশ্বমানের গণপরিবহন গড়ে তোলা এবং পরিবার গড়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের হাতে থাকা সব সরঞ্জাম কাজে লাগানোর অঙ্গীকার করেছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মামদানি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি না দিলেও ‘ওই লোকটির’ বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে আমি সম্মান জানাই। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নেতানিয়াহু বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।  

আইসিসির অভিযোগপত্রে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামদানি বলেন, আমি চাই এই শহর আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার জন্য দাঁড়াক।

তবে এমন পদক্ষেপ নিলে ব্যাপক চাপে পড়তে পারেন এই ডেমোক্রেট নেতা। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহৎ আবাসস্থল হলো নিউইয়র্ক। ফলে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করলে তিনি ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে পারেন। এর আগে তিনি ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগানকে নিন্দা জানাতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি এ ধরনের স্লোগান ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার কথাও বলেছিলেন।

আবার আইনগতভাবেও নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা কার্যত অসম্ভব হতে পারে। শহর বা অঙ্গরাজ্যের আইন ভঙ্গ না হলে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ায় কূটনৈতিক অনাক্রম্যতাও (ইমিউনিটি) ভোগ করেন।  

তবুও আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা মামদানি দাবি করেছেন, রাজ্য ও স্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের সেই পদক্ষেপ নিতে হবে যা ফেডারেল সরকার নিতে পারছে না। এ মুহূর্তে নেতৃত্বের জন্য আমরা ফেডারেল সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না। এখন শহর ও রাজ্যগুলোকেই দেখাতে হবে নিজেদের মূল্যবোধ ও জনগণের পক্ষে দাঁড়ানো আসলে কেমন।

তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন ক্যালিফোর্নিয়ার বর্তমান গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে, যিনি ২০০৪ সালে সানফ্রান্সিসকোর মেয়র থাকা অবস্থায় ফেডারেল আইন অমান্য করে সমলিঙ্গ দম্পতিদের বিয়ের লাইসেন্স প্রদান করেছিলেন। মামদানি জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধেও তিনি একই পদক্ষেপ নিতে চান, যাকে ২০২৩ সালে আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।

কলাম্বিয়া ল’ স্কুলের অধ্যাপক ম্যাথিউ সি. ওয়াক্সম্যান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, মামদানির এই ঘোষণা বাস্তব কোনো আইন প্রয়োগের পদক্ষেপ নয়, বরং রাজনৈতিক প্রদর্শনীর মতো। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এ ধরনের গ্রেপ্তারের নজির আগে কখনও নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে জুলাই মাসে হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে নেতানিয়াহু মামদানির হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে বলেন, বিশ্বে যথেষ্ট পাগলামিই চলছে, এসবের শেষ নেই। এটা অনেকটা হাস্যকর, কারণ বিষয়টা একেবারেই গুরুতর নয়। আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নিউইয়র্কে আসব, তারপর দেখা যাবে।

এ সময় ট্রাম্প মামদানিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তার আচরণ ঠিক রাখা ভালো, না হলে বড় সমস্যায় পড়বে।

গাজা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগ করে ও জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছিল।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।