ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তরুণদের পছন্দের কে এই সুশীলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০২, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫
নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তরুণদের পছন্দের কে এই সুশীলা সুশীলা কারকি

নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে আজ বৈঠক হবে সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেল এবং আন্দোলনকারী জেন-জি প্রতিনিধিদের মধ্যে।  

জেন-জি আন্দোলনের তরুণ নেতারা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পদে তাদের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আজকের আলোচনা এই সিদ্ধান্তকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রথমে কারকির সহযোগীদের সঙ্গে সেনা নেতৃত্বের বৈঠক হবে। সেখানে সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেলও উপস্থিত থাকবেন। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী আলোচনা প্রেসিডেন্টের কার্যালয় শীতল নিবাসে অনুষ্ঠিত হবে। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ এরইমধ্যে কারকির প্রার্থিতাকে সমর্থন জানিয়েছেন। এই পদক্ষেপ তাকে জেন জেড আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী হিসেবে আরও শক্তিশালী করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নেপালি তরুণদের প্রার্থী সুশীলা কারকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত। তিনি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে পরিচিতি পান।  

১৯৭৯ সালে বিরাটনগরে একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। সেই থেকে তার রায়গুলো তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রশংসিত হলেও সংসদ সদস্যদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

কারকির জন্ম ১৯৫২ সালের ৭ জুন। তিনি সাত ভাইবোনের মধ্যে বড়। তিনি ১৯৭২ সালে বিরাটনগরের মহেন্দ্র মোরাং ক্যাম্পাস থেকে বিএ, ১৯৭৫ সালে ভারতের বেনারস  হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ এবং ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৭৯ সাল থেকে তার আইনজীবী জীবন শুরু হয়। তিনি ২০০৭ সালে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হন এবং ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাড-হক বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১০ সালে তিনি স্থায়ী বিচারপতি হন।

২০১৭ সালে নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদী সেন্টার) দলের সংসদ সদস্যরা তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক রায়ের অভিযোগ এনে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে জনমতের চাপ এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশে সেই প্রক্রিয়া পরে আটকে যায়।

তিনি দুটি বইও লিখেছেন— কারা, যেখানে বিরাটনগর কারাগারে বন্দি থাকার অভিজ্ঞতা এবং নেপালি নারীদের দমন-নিপীড়নের কাহিনি উঠে এসেছে; এবং ন্যায়, একটি আত্মজীবনী।

বুধবার এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় কারকি দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ মেনে নিয়েছেন বলে জানান। সিএনএন-নিউজ১৮-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেন যে তরুণ-তরুণীরা তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত নেপালের প্রশাসন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, নেপালে সবসময়ই সমস্যা ছিল। এখন পরিস্থিতি খুবই কঠিন।

নেপালে এখনো বিক্ষোভ চলছে। শহরে শহরে জারি রয়েছে কারফিউ। কারকি বলেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করব নেপালের উন্নয়নের জন্য। আমরা দেশের জন্য একটি নতুন সূচনা করার চেষ্টা করব।

নেপালের রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহও তার সমর্থন জানিয়েছেন। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী/নির্বাচনী সরকার পরিচালনার প্রস্তাবকে আমি পূর্ণ সমর্থন জানাই। আমি আপনাদের বোঝাপড়া, প্রজ্ঞা ও ঐক্যের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। এটি প্রমাণ করে আপনারা কতটা পরিণত।

তবে সুশীলা কারকির পাশাপাশি নেপাল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক সিইও কুলমান ঘিসিংয়ের নামও আলোচনায় ছিল। তবে দ্য হিমালয়ান পোস্ট জানিয়েছে, জেন জেড আন্দোলনের তরুণ-তরুণীরা শেষ পর্যন্ত কারকিকেই তাদের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

দুর্নীতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা ও ১৯ জনেরও বেশি তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা জেন-জেডদের আন্দোলনের চাপেই প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে দেশ সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।