ঢাকা, বুধবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখবে করবিনের ‘গাজা ট্রাইব্যুনাল’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৩, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
গাজা যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখবে করবিনের ‘গাজা ট্রাইব্যুনাল’ জেরেমি করবিন

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিন দুইদিনব্যাপী এক ‘ট্রাইব্যুনাল’ আয়োজন করতে যাচ্ছেন। এটি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখবে।

আয়োজকরা বলছেন, এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা।

আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘ নিযুক্ত বিশেষ রাপোর্টিয়ার ফ্রান্সিসকো আলবানেজ, ব্রিটিশ সার্জন ভিক্টোরিয়া রোজের মতো গাজায় স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক, ত্রাণকর্মী, বিশেষজ্ঞ এবং হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা। খবর আল জাজিরার।

আয়োজকরা বলেছেন, লেবার পার্টির এমপি রিচার্ড বারগন এবং বিভিন্ন সাংবাদিকও এতে অংশ নেবেন। তাদের মধ্যে আছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ম্যাট কেনার্ড। তিনি গাজার ওপর চলাচল করা ব্রিটিশ নজরদারি বিমানগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ওয়েস্ট মিনিস্টারে লন্ডন’স চার্চ হাউসে তারা বিভিন্ন প্যানেলে অংশ নেবেন। সেখানে যুক্তরাজ্যের আইনি দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা হবে।

এই ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গণহত্যায় যুক্তরাজ্য সরকারের সম্পৃক্ততার সম্পূর্ণ পরিধি জনগণ জানার অধিকার রাখে। এজন্যই আমরা ‘গাজা ট্রাইব্যুনালে’র আয়োজন করছি। আমরা সত্য উদঘাটন করব এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাব।

২০২৩ সালের ৪ জুন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পরিচিত ফিলিস্তিনপন্থী নেতা করবিন হাউস অব কমন্সে একটি বিল পেশ করেন। বিলের মাধ্যমে দাবি করা হয় যে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ—যেমন অস্ত্র সরবরাহ, নজরদারি বিমান এবং রয়্যাল এয়ার ফোর্সের ঘাঁটি ব্যবহারের বিষয়গুলো স্বতন্ত্রভাবে তদন্ত করা হোক।

এই বিল অনেক এমপি এবং ২০টির বেশি সাহায্যকর্মী সংস্থার সমর্থন পেলেও ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি তা আটকে দেয়। করবিন বলেন,  সত্য ঢেকে রাখা যাবে না। আমরা ব্রিটিশদের গণহত্যায় সম্পৃক্ততার পুরো চিত্র উদঘাটন করব এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা করব।

প্রায় দুই বছর ধরে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কে লাগাম টানতে এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপ বাড়াতে অনুরোধ করছেন। মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ও গবেষকরা ইসরায়েলের হামলাকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সর্বশেষ ইউগোভ জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্রিটিশ নাগরিক ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এবং অনেকেই গাজার ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা মনে করছেন।

গত সপ্তাহে করবিন আল জাজিরাকে বলেন, সংসদে মতামতের মধ্যে ধীর কিন্তু স্থির পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কারণ যুক্তরাজ্যের মানুষ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি দেখিয়েছে।

যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে চরম- কট্টর ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং কিছু অস্ত্র রপ্তানি লাইসেন্স স্থগিত করেছে। তবে যুক্তরাজ্যে তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ইসরায়েলে গ্লোবাল স্পেয়ারস পুলের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারছে।

গাজার ওপর দিয়ে চলাচল করা যুক্তরাজ্যের নজরদারি ফ্লাইট নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসব বিমান কয়েকশবার সাইপ্রাস থেকে উড়েছে। যুক্তরাজ্য বলছে, এই বিমানগুলো হামাসের কাছে জিম্মি ইসরায়েলিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

তবে অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স গ্রুপ জানায়, সংসদ বা সাধারণ মানুষ নজর রাখছে না, তাই বোঝা যাচ্ছে না এই ফ্লাইট থেকে যত ব্রিটিশ গোয়েন্দা তথ্য মিলেছে, তার কতটা ইসরায়েলের কাছে গেছে।

গ্রুপটি বলছে, এসব ফ্লাইট কেবল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি ও পর্যবেক্ষণই নয়, দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে লক্ষ্য নির্ধারণের কাজও করেছে কিনা, তা অজানা।  

তারা বলেছে, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে এবং যুক্তরাজ্যের ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সামরিক সহযোগিতা, যেমন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহ, এই ফ্লাইটগুলোর প্রকৃতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়ে গেছে।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।