ঢাকা, সোমবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ওয়াশিংটনে বৈঠক ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৮, আগস্ট ১৮, ২০২৫
ওয়াশিংটনে বৈঠক ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

হোয়াইট হাউসে সোমবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এবং গোটা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এটি গত শুক্রবার আলাস্কায় হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হতে পারে।

বাহ্যিকভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প- ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠক প্রত্যাশামাফিকই নিষ্প্রভ মনে হয়েছে। কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি, নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি, বড় কোনো ঘোষণা হয়নি।  

এই বৈঠক থেকে ইউক্রেন ও ইউরোপকে হয়তো এমন একটি গোপন চুক্তির বাইরে রাখা হতে পারে, যা বিশ্বের দুই প্রধান পরমাণু শক্তি করেছে। তবে, ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা এটি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলে সেটি ঘটবে না।

ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে উপস্থিত থাকছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসসহ অন্যান্য নেতারা।  

এই বৈঠকের উদ্দেশ্য কেবল জেলেনস্কিকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মতো ওভাল অফিসে আবার অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেওয়া ঠেকানোই নয়, তারা দুইটি বিষয় ট্রাম্পকে স্পষ্টভাবে বোঝাতে চান—প্রথমত, ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো শান্তি চুক্তি হতে পারে না; দ্বিতীয়ত, চুক্তিটিকে অবশ্যই ‘লৌহ-কঠিন’ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে।  
 
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—ইউরোপের নেতারা চান ট্রাম্প যেন দেখেন, ইউক্রেন ও ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ। একইসঙ্গে তারা নিশ্চিত হতে চাইছেন, পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে রুশ দাবির কাছে নতি স্বীকার করাতে না পারে।

কিয়ার স্টারমারের কূটনৈতিক দক্ষতার পরীক্ষা হবে এখন। ট্রাম্প স্টারমারকে পছন্দ করেন এবং তার কথা শোনেন। তিনি ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুত্তেকেও পছন্দ করেন। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর প্রতি ট্রাম্পের ভালোবাসা কম, বিশেষ করে ম্যাক্রোঁর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছার কারণে হোয়াইট হাউস তার সমালোচনা করেছে।

ইউক্রেনে শান্তি আনার জন্য কোনো পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। ইউরোপীয় নেতারা বারবার বলেছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত জোরপূর্বক পরিবর্তন করা যাবে না। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, তিনি কোনো ভূমি ছাড়বেন না এবং ইউক্রেনের সংবিধানও তা অনুমোদন করে না।

কিন্তু পুতিন দনবাস চাইছেন, যার প্রায় ৮৫ শতাংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। তিনি ক্রিমিয়া ফেরত দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই রাখছেন না। তবে সাবেক এস্তোনিয়ান প্রধানমন্ত্রী কায়া কালাস যেমন বলেছিলেন, ইউক্রেনের বিজয় শুধু দখলকৃত জমি পুনর্দখল নয়।  

যদি ইউক্রেন এমন ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা (ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর মতো) পায়, যা ভবিষ্যতের রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে পারে এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনকে সুরক্ষিত রাখে, সেটিও বিজয় হিসেবে গণ্য হবে।

এখন যা স্পষ্ট হচ্ছে, তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার আলোচনায় একটি প্রস্তাব ঘুরপাক খাচ্ছে, যেখানে কিছু ইউক্রেনীয় জমি হারানোর বিনিময়ে এমন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হবে যে ইউক্রেনকে আর কোনো জমি ছাড়তে হবে না।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে বড়।  ইউক্রেন কি এমন চুক্তি মেনে নেবে, যা যুদ্ধ থামাবে ঠিকই, কিন্তু ভূমি হারাতে হবে—যে ভূমি বাঁচাতে হাজার হাজার প্রাণ ঝরে গেছে? যদি রাশিয়ার দখলে এখনো না যাওয়া দোনেৎস্কের বাকি ৩০ শতাংশ ইউক্রেন ছাড়তে বাধ্য হয়, তবে কি কিয়েভের দিকে পশ্চিমমুখী রুশ আগ্রাসনের পথ বিপজ্জনকভাবে খোলা হয়ে যাবে?

স্টারমারের কথিত ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর ভূমিকা কী হবে? আগের যে পরিকল্পনা ছিল, সেখানে প্রচুর সেনা মোতায়েনের কথা বলা হয়েছিল, এখন তা সীমিত হয়েছে ‘আকাশ ও সমুদ্র সুরক্ষা’ এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে সাহায্য করার দিকে।

যুদ্ধক্ষেত্রে শান্তি এলেও পরিস্থিতি বিপজ্জনক। সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানান, লড়াই থামলেও পুতিন সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করবেন, অস্ত্রশস্ত্র বাড়াবেন এবং হয়তো তিন-চার বছরের মধ্যে নতুন আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা অর্জন করবেন।  

যদি আর যখন তা ঘটে, তখন প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার মতো সাহসী পাইলট, হোক তা টাইফুন বা এফ-৩৫ চালক খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।