ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৬ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন সংঘাতে চীন সত্যিই রাশিয়াকে সাহায্য করছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৯, জুলাই ৩১, ২০২৫
ইউক্রেন সংঘাতে চীন সত্যিই রাশিয়াকে সাহায্য করছে?

রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে একটু একটু করে কোমর ভেঙেছে ইউক্রেনের। পশ্চিমা ইন্ধন ছাড়া দেশটির যুদ্ধবাজি আর যেন এক মুহূর্তও চলছে না।

দেশটির নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কির গদি যায় যায় অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে যেন শত্রু বাড়ানোর মিশনে নেমেছে ইউক্রেন। দেশটির টার্গেট এখন চীন।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা অধিদপ্তর দাবি করেছে, রাশিয়ান ডিকয় ড্রোন (ছদ্মবেশী ড্রোন)  তৈরিতে ব্যবহার হওয়া সব উপাদান নাকি চীনের। সত্যিই কি এমন হতে পারে? হলে তো, চীন যে রাশিয়ার যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালছে, ইউক্রেনের এমন দাবি সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

আলোচিত ড্রোনটি দেখতে ইরানি বিখ্যাত শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের মতো। তবে এর ডেল্টা-উইং কিছুটা ছোট। এটি ১৫ কিলোগ্রাম ওজনের ওয়ারহেড নিয়ে উড়তে পারে। ঝাঁকে ঝাঁকে এ ধরনের ড্রোন পাঠিয়ে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার বারোটা বাজিয়েছে রাশিয়া। ২০২৪ সালের কয়েক মাসজুড়ে যত ড্রোন মোতায়েন করেছে রাশিয়া, এখন দেশটি এক রাতেই ইউক্রেনে আক্রমণে তার চেয়েও বেশি ড্রোন পাঠাচ্ছে।

ড্রোনগুলোর দুয়েকটি পেয়ে সেগুলোর ভেতরে চীনা উপাদান পেয়ে গেছে বলে ইউক্রেনের দাবি। চীনা কোন কোম্পানি সেসব তৈরি করেছে, তাও তারা বের করে ফেলেছে। এই প্রথম দাবি করা হলো যে, রাশিয়ান ড্রোন পুরোপুরি চীনা উপাদান দিয়ে তৈরি। এই আলোচনা বড় হলে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের ইস্যুতে চীনকে আবার চেপে ধরতে পারে পশ্চিমা শিবির।

ইউক্রেন সংঘাতে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে চীন। দেশটি চলমান সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে কথা বলে আসছে। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখা আর দেশটির কাছে অস্ত্রের উপাদান ও প্রযুক্তি রপ্তানির পশ্চিমা অভিযোগের তীর চীনকে বিদ্ধ করেছে অনেকদিন থেকেই।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অতীতে অভিযোগ করেন, রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক এবং বিমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে চীন। মূলত সেমিকন্ডাক্টর আর ড্রোন সরঞ্জাম নিয়েই বেশি হইচই। এমনও বলা হয়েছে যে, রাশিয়ার শাহেদ ড্রোনের প্রায় ৬৫ শতাংশ উপাদান চীনে তৈরি করা হয়।

ইদানীং রাশিয়ার অস্ত্র শিল্পে চীন সরাসরি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে বলে ইউক্রেন অভিযোগ করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রমাণ ছাড়াই বলা হয়েছে, রাশিয়াকে অস্ত্র এবং বারুদ সরবরাহ করছে চীন। রাশিয়ার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা উৎপাদনে চীনা প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।  

তখন জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেন বিশ্বাস করে যে, চীনা প্রতিনিধিরা রাশিয়ার ভূখণ্ডে কিছু অস্ত্র তৈরিতে জড়িত। তিনি চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করার কথাও তুলেছিলেন।

চীনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের এমন অভিযোগের শেষ নেই। সেগুলো কি সত্য? রাশিয়াকে সাহায্য করার পেছনে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়া চীনের আর কোনো স্বার্থ থাকতে পারে? হ্যাঁ, পারে। পুরো বিশ্ব জানে, রাশিয়াকে এই সংঘাতে ইউক্রেন নামিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিতে। রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়াই পশ্চিমা শিবিরের লক্ষ্য।  

রাশিয়া যদি হেরে যায়, তারপর কিন্তু চীনের ওপর পশ্চিমাদের বদনজর পড়বে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত তাই আর কোনো আঞ্চলিক সংঘাত নয়। এটি এক মোড়লের একমেরু বিশ্ব গড়ার মিশন, যা চীন ও রাশিয়া চায় না, আরও অনেকেই চায় না।

এমএইচডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।