থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সেনাদের মধ্যকার সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে থাইল্যান্ডে ১৫ জন ও কম্বোডিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন।
সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলো থেকে প্রাণ বাঁচাতে এরইমধ্যে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ এলাকা ছেড়েছেন।
শুক্রবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ভারী কামান ও রকেট হামলা চালায় উভয়পক্ষ। গত এক দশকের মধ্যে এটিই এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম বেচায়াচাই জানান, পরিস্থিতি এখন যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে।
থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ছয়টি এলাকায় লড়াই শুরু হলেও শুক্রবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টি এলাকায়।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল সুরাসান্ত কংসিরি জানান, কম্বোডিয়ার বাহিনী ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী গোলাসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করছে, যার জবাবে থাই সেনারা কৌশলগতভাবে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে।
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে দেশটিতে ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সেনা নিহত হন। আহত হন আরও ৩০ জনের বেশি সাধারণ মানুষ ও ১৫ জন সেনা।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, থাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে—সীমান্তবর্তী সুরিন, সিসাকেট, বুরিরাম ও উবন রাতচাথানি প্রদেশ থেকে এক লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার প্রিয়াহ ভিহিয়ার প্রদেশ থেকেও প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে খেমার টাইমস।
থাইল্যান্ডে তিন শতাধিক অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য অনেক হওয়ায় বাস্তুচ্যুতদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার প্রতিবেদক টনি চেং।
কম্বোডিয়ার সংস্কৃতি ও শিল্প মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, থাইল্যান্ডের গোলাবর্ষণে ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দির ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শুক্রবার ভোরে থাইল্যান্ড থেকে কম্বোডিয়ার দিকে শেল ছোড়া হয়েছে বলেও জানায় দেশটির সেনাবাহিনী।
কম্বোডিয়ার সেনা সূত্র জানায়, থাইল্যান্ড ৯০ মিনিটের ব্যবধানে দুইবার ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
এই সংঘর্ষ নিয়ে শুক্রবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
এরইমধ্যে থাইল্যান্ড দাবি করেছে, তারা কম্বোডিয়ার ভেতরে লক্ষ্য করে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে বোমা বর্ষণ করেছে।
পাল্টা হিসেবে কম্বোডিয়ান বাহিনী দীর্ঘপাল্লার রকেট ছুড়েছে থাই সীমান্তের বেসামরিক এলাকায়।
উভয় দেশই সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে। সীমান্তের বিতর্কিত এলাকায় ছোট অস্ত্রের লড়াই থেকে শুরু হয়ে পরে তা ভারী গোলাবর্ষণে রূপ নেয়।
থাইল্যান্ডের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
কম্বোডিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, দুই দেশ যেন সংযম দেখিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে।
আরএইচ