ঢাকা, শনিবার, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৬ জুলাই ২০২৫, ০০ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ভারতীয় অনেক মুসলিমকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে: এইচআরডব্লিউ

আন্তজার্তিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৪৮, জুলাই ২৪, ২০২৫
ভারতীয় অনেক মুসলিমকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে: এইচআরডব্লিউ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই গত কয়েক সপ্তাহে শত শত বাঙালি মুসলিমকে ভারত জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

এতে বলা হয়েছে, এসব বাঙালি মুসলিমদের অনেকেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা। তারা ভারতীয় নাগরিক। তবে ঠেলে পাঠানোর সময় তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বুধবার (২৩ জুলাই) নিজেদের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠানোর অভিযান জোরদার করে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এটি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ ঠেকানোর একটি পদক্ষেপ।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, বিজেপি নির্বিচারে বাঙালি মুসলিমদের, এমনকি ভারতীয় নাগরিকদেরও দেশ থেকে বিতাড়িত করে বৈষম্যকে আরও উসকে দিচ্ছে। অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার যে দাবি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ করছে, তা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ তারা আইনগত প্রক্রিয়া, সংবিধানিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত জুন মাসে ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন, জোর করে বাংলাদেশে পাঠানোর পর ফেরত আসা ভারতীয় নাগরিক ও এবং আটক ও এখনো নিখোঁজ থাকাদের পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ৮ জুলাই একটি প্রতিবেদন দিয়েছে এইচআরডব্লিউ। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ভারত সরকার ‘পুশ-আউট’ বা জোরপূর্বক ঠেলে পাঠানো ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, গত ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ভারত বাংলাদেশে দেড় হাজারের বেশি মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশুকে ‘পুশ-ইন’ করেছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী, যারা মায়ানমার থেকে এসেছে। এই ‘পুশ-ইন’ এখনও চলমান।

এইচআরডব্লিউ বলছে, বিজেপি শাসিত আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা ও রাজস্থান রাজ্যের কর্তৃপক্ষ মূলত দরিদ্র মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করেছে। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ আছে যে, নাগরিকত্বের দাবির যথাযথ যাচাই না করেই সীমান্তরক্ষী বাহিনী আটক ব্যক্তিদের বাংলাদেশের দিকে ‘পুশব্যাক’ করতে হুমকি ও মারধরের মতো নিপীড়নমূলক পন্থা অবলম্বন করেছে। এর ফলে, ‘পুশ-আউট’ করা ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ হয়েছে, ভারত সরকার তাদের ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছে।

ভারতীয় নাগরিক ও আসামের একটি স্কুলের সাবেক শিক্ষক খায়রুল ইসলাম (৫১) এইচআরডব্লিউকে বলেছেন, গত ২৬ মে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা তার হাত বেঁধে, মুখ চেপে ধরে জোর করে বাংলাদেশে পাঠায়। ওই সময় তার সঙ্গে আরও ১৪ জন ছিলেন।  

খায়রুল ইসলাম বলেন, আমি যখন বাংলাদেশে সীমান্ত পার হতে অস্বীকৃতি জানাই, তখন বিএসএফ অফিসার আমাকে মারধর করে এবং চারবার আকাশে রাবার বুলেট ছোড়ে। দুই সপ্তাহ পর আমি কোনোভাবে ভারতে ফিরে আসতে সক্ষম হই।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া কাউকে আটক ও দেশ ছাড়া করা মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যেকোনো ‘পুশ-আউটের’ শিকার ব্যক্তির জন্য ভারত সরকারকে অবশ্যই মৌলিক আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে আছে, দেশ ছাড়া করার কারণ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানানো, দক্ষ ও উপযুক্ত আইনজীবীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং বিতাড়নের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রাখা।

জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।