ঢাকা, শনিবার, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ জুলাই ২০২৫, ২৩ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

৮১ আফগানকে ফেরত পাঠিয়ে যে বার্তা দিল জার্মানি

সাগর আনোয়ার, জার্মানি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫২, জুলাই ১৯, ২০২৫
৮১ আফগানকে ফেরত পাঠিয়ে যে বার্তা দিল জার্মানি অভিবাসন ইস্যুতে আয়োজিত ইউরোপীয় ছয়টি দেশের সম্মেলনে কড়া বার্তা দিয়েছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট

সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের পর অবৈধ অভিবাসী ও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের নিজ দেশে বিশেষ ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো শুরু করল জার্মানি। শুক্রবার (১৮ জুলাই) লাইপিজ থেকে এই বিশেষ ফ্লাইটে ৮১ জন আফগান নাগরিককে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এ সময় ইউরোপে কারা থাকবে আর কারা থাকবে না, তা একান্তই ইউরোপীয় রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট। তিনি বলেছেন, অবৈধ অভিবাসন রুখতে এখন থেকে নেতৃত্ব দেবে জার্মানি।

এ ছাড়া শুক্রবার অভিবাসন ইস্যুতে ইউরোপজুড়ে কঠোর অবস্থান নিতে জার্মানির নেতৃত্বে ছয় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হয়েছেন। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট বলেছেন, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কে ইউরোপে আসবে, তা মানবপাচারকারীরা নয়, আমরাই ঠিক করব।

জার্মানির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জুগস্পিটজে পর্বতে অনুষ্ঠিত অভিবাসন শীর্ষ সম্মেলনে শুক্রবার তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্মেলন চলাকালেই ৮১ জন আফগান নাগরিককে বিশেষ ফ্লাইটে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে নতুন অভিবাসীদের কঠোর বার্তাও দেওয়া হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউরোপীয় অভিবাসন সম্মেলনে জার্মানির আমন্ত্রণে অংশ নেন ফ্রান্স, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, চেক প্রজাতন্ত্র ও অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সম্মেলনে আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট বলেন, আমাদের এই সম্মেলন এক ধরনের প্রতীকী বার্তা। এখানে বোঝানো হয়েছে যে, ইউরোপ একসাথে দাঁড়াচ্ছে, সংকল্পবদ্ধ হচ্ছে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে।

ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীরা থাকবে ইউরোপের বাইরেই
অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীদের ইউরোপের বাইরে কেন্দ্র স্থাপন করে সেখানেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এমন পরিকল্পনা দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে সম্মেলনে অংশ নেওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্মত হয়েছেন। এ বিষয়ে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের সুরক্ষা মানেই আবেদনকারীকে ইউরোপের মাটিতে থাকতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

সিরিয়া ও আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত
বৈঠকে সিরিয়া ও আফগানিস্তানের নাগরিকদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার পক্ষেও মত দেন ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট বলেন, এই দুই দেশের নাগরিক যারা যুদ্ধের কারণে ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের এখন নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে জার্মানি সকালে ৮১ জনকে পাঠিয়ে তা শুরু করল।

জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইউরোপকে এখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দ্রুত আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে সামাজিক চাপ আরও বাড়বে, সমাজে বিভাজন আরও তীব্র হবে।

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো বলেন, ইউরোপের সীমান্তে অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকানো ছাড়া এই সমস্যার সমাধান নেই। আমরা সবাই একইভাবে উদ্বিগ্ন। অতিরিক্ত অবৈধ অভিবাসন হলে ইউরোপীয় সমাজের উচ্চমান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টমাস সিয়েমনিয়াক জানান, বেলারুশ সীমান্তে তার দেশ কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। বাল্টিক অঞ্চল দিয়ে নতুন রুটে পাচারের চেষ্টা হচ্ছে, সেটাও বন্ধ করতে হবে।

অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নারও জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডটের অবস্থানকে সমর্থন করে বলেন, যত বিতর্কই থাকুক,  আফগানিস্তানের মতো দেশেও ফেরত পাঠানো উচিত।

মানবিকতার আহ্বান সমালোচকদের
তবে জার্মান স্বরাষ্ট্র আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডটের কড়া অবস্থানের সমালোচনা করেছেন জার্মান সরকারের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার ও চ্যান্সেলর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী নাটালি পাওলিক।

তিনি বলেন, আমরা পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন চাই। কিন্তু এভাবে কেবল প্রতিরোধের দিকে গেলে সেটা হবে একধরনের ‘মাইগ্রেশন প্রিভেনশন টার্বো’। আমাদের দরকার একটি আধুনিক, মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অভিবাসন নীতি।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।