ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ আষাঢ় ১৪৩২, ২৪ জুন ২০২৫, ২৭ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পারমাণবিক দুর্যোগ ইরানে, বিপদ কেন ভারতের?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৭, জুন ২৩, ২০২৫
পারমাণবিক দুর্যোগ ইরানে, বিপদ কেন ভারতের?

ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানোর সময় ওই অঞ্চলের জনসাধারণের কথা কতটুকু ভেবেছিল যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েল? এখন বাতাসে চেপে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লে পৃথিবীর বিশাল জনগোষ্ঠী যে বিপদে পড়বে, তার দায় কি দেশ দুটি নেবে? তেজস্ক্রিয় বাতাস ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য কী কী দুর্যোগ ডেকে আনতে চলেছে? পশ্চিমা শিবির এসব কখনো বিবেচনা করেছে?

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় অংশগ্রহণের পর এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেননা, তিন দেশের সংঘাত বিপদে ফেলতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোয়।

বায়ুমণ্ডলের লোয়ার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার আর আপার ট্রপোস্ফিয়ার দিয়ে যে জেট স্ট্রিম বায়ু প্রবাহ চলে, তা ইরানের ওপর দিয়ে সরাসরি পূর্বদিকের দেশগুলোর দিকেই আসে। তাই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হলে, ভারতের মতো দেশগুলোর ওপর দিয়েই প্রথম বয়ে যাবে তেজস্ক্রিয়তার বিষাক্ত ধাক্কা।  

ভারতে ১৪০ কোটি মানুষের বাস। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা আর চেন্নাইয়ের মতো ঘনবসতিপূর্ণ মেগা সিটির দেশ এটি। তাদের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি এবং সংকটে থাকা স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো যদি তেজস্ক্রিয়তার মতো ভয়ঙ্কর দুর্যোগে পড়ে, তাহলে পরিস্থিতি হবে অবর্ণনীয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, ইরানের ক্ষতির পরিমাণ অস্বীকার, উপগ্রহচিত্র থেকে ক্ষতির পরিমাণ বিশ্লেষণ, সব মিলিয়ে দেশটির ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে। আশঙ্কা সত্য হলে কী হবে? জেটস্ট্রিম বায়ু প্রবাহ দ্রুত পাকিস্তান এবং উত্তর ও পশ্চিম ভারতে তেজস্ক্রিয় কণা ছড়িয়ে দেবে। খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতার দিক থেকে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় এমন দূষণ সেখানকার রবি ফসল ধ্বংস করতে পারে। এতে দেশটির জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব পড়বে।

দিল্লির মতো জায়গা এর মধ্যেই বায়ু দূষণে ধুঁকছে। ইরানের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লে সেখানে তেজস্ক্রিয় মেঘ হানা দিতে পারে। তেজস্ক্রিয় ধুলো শুষ্ক রাজস্থানের পানির উৎস অ্যাকুইফারগুলো দূষিত করে রাখতে পারে বছরের পর বছর। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ উত্তর প্রদেশ আর বিহারের পানীয় জল এবং ধান উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে। বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে এমন দূষণ হলে তা হিমালয়ের হিমবাহ এবং তুষারের স্তূপগুলো বিষাক্ত করে তুলবে। তখন ভারতের মানুষের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত নদীগুলো দেশটির আনাচেকানাচে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াবে।

ভারতের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মাটি ও সেচ ব্যবস্থার তেজস্ক্রিয় দূষণ দেশটির অর্থনীতি ও সমাজকে ধ্বংস করবে। দেশটির বাণিজ্য এবং পর্যটন ও তীর্থযাত্রা অর্থনীতিতে নামবে ধস। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সনাক্ত হলে অনেক দেশই ভারতীয় চাল, গম এবং দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে। দিল্লি এবং নয়দার মতো শহরগুলো আক্রান্ত হলে তথ্যপ্রযুক্তি এবং পরিষেবা শিল্পের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেসব স্থান থেকে সরে যেতে পারে।

এমএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।