ঢাকা, শুক্রবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জুন ২০২৫, ২৩ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরানের সঙ্গে পেরে না উঠে যুক্তরাষ্ট্রকে ডাকছে ইসরায়েল!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:৩৭, জুন ১৯, ২০২৫
ইরানের সঙ্গে পেরে না উঠে যুক্তরাষ্ট্রকে ডাকছে ইসরায়েল!

ইসরায়েল ও ইরানের সরাসরি সংঘাতে এক নতুন মোড় নিয়েছে। ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে ইরানের পক্ষ থেকে চালানো বিস্তৃত ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ড্রোন হামলায় জায়নবাদী রাষ্ট্রটির সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলো ওপর যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে তেলআবিব স্পষ্টত বুঝতে পারছে—এই সংঘাতে তারা আর একা এগোতে পারছে না।

 

ফলে সংঘাত যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, এটি কোনো দুর্বল হয়ে পড়া ইরানের ছবি নয়, যারা একটি শান্তিচুক্তির আশায় কাকুতি মিনতি করছে; বরং এটি প্রতিফলিত করছে ইসরায়েলের কৌশলগত দুর্বলতা।

এখন মনে হচ্ছে, ইসরায়েলি নেতৃত্ব হয়তো ইরানের প্রতিরোধক্ষমতা, সামরিক অবকাঠামোর দৃঢ়তা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা—এই সবকিছুকেই উল্লেখযোগ্যভাবে অবমূল্যায়ন করেছে।

ফলে মুখ বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সামরিক সহায়তা এখন তাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, তাদের আইরন ডোম, ডেভিড স্লিং এবং অ্যারো মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু ইরানের যৌথ ড্রোন-মিসাইল হামলা, বিশেষ করে ফাত্তাহ হাইপারসনিক মিসাইল ও শাহেদ ড্রোনের সোয়ার্ম অ্যাটাক (ঝাঁক বেধে আক্রমণ) এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার গোমর ফাঁস করে দিয়েছে।

গত সপ্তাহে ইরানের একাধিক মিসাইল তেল আবিব, রামাত গান, হোলোন এবং বেয়ার শেভায় সরাসরি আঘাত হানে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সোরোকা হাসপাতালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইসরায়েলের অভিযোগ। এসব আঘাতে ইসরায়েলের জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের প্রতিরক্ষা মহলে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার দাবি জোরালো হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পেন্টাগনকে সরাসরি ময়দানে চেয়ে বারবার ইরানকে তার দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও এর জনগণেরও হুমকি বলে চিত্রিত করতে চাইছেন। এমনকি মার্কিন প্রশাসন যেন এই যুদ্ধে নেমে পড়ে, সেজন্য সম্প্রতি তেলআবিবে ‘জনাব প্রেসিডেন্ট, কাজটি শেষ করুন’ (মিস্টার প্রেসিডেন্ট, ফিনিশ দ্য জব) লেখা বিলবোর্ডও শোভা যাচ্ছে বলে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের খবরে প্রকাশিত হয়েছে।
 
হোয়াইট হাউসে এখন যুদ্ধের বিপরীতে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। ট্রাম্প একদিকে যেমন ইসরায়েলকে ‘একমাত্র বন্ধুরাষ্ট্র’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন, তেমনি আবার সম্পূর্ণ যুদ্ধ জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকতেও চান। তার বক্তব্য অনেকটা এমন- আমি শুধু চাই, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র না পায়। কিন্তু আমি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে যেতে চাই না।

তবে হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের একাধিক সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক রসদ পাঠিয়েছে এবং তারা ইরানে ‘স্বল্প মাত্রায় আক্রমণের’ কথা ভাবছে।

ইসরায়েল কেন যুক্তরাষ্ট্রকে টানতে চায়?
প্রযুক্তিগত সহায়তা: ইরানের আন্ডারগ্রাউন্ড স্থাপনাগুলো যেমন ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করতে প্রয়োজন বিশেষ ধরনের বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা—যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই রয়েছে।

আকাশসীমা দখল ও জ্যামিং সক্ষমতা: ইরান বর্তমানে ইলেকট্রনিক যুদ্ধেও বেশ শক্তিশালী হয়েছে। মার্কিন এয়ারফোর্স ছাড়া ইসরায়েল সহজে আকাশ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারছে না।

মানসিক চাপ সৃষ্টি ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া: যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধ জড়ালে, তা ইরান ও তার মিত্রদের ওপর বড় ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করবে। একইসঙ্গে এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বার্তা—ইসরায়েল একা নয়।

এদিকে ইরান ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলায় অংশ নেয়, আমরা পুরো অঞ্চলে তাদের লক্ষ্যবস্তু খুঁজে প্রতিশোধ নেব।

এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধের বিস্তার শুধু ইসরায়েল-ইরানে সীমাবদ্ধ না থেকে সিরিয়া, লেবানন, ইরাক এমনকি হরমুজ প্রণালী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে—যার পরিণতি হবে বিশ্ব অর্থনীতিতে জ্বালানি সংকট ও অস্থিরতা।

ইসরায়েল এখন আর একা লড়াই করতে আগ্রহী নয়—হোক তা সামরিক দিক থেকে বা কূটনৈতিকভাবে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অগ্রণী ভূমিকা’ নিতে বাধ্য করতে চায়, কারণ এককভাবে তারা ইরানের প্রযুক্তি, প্রতিরোধ এবং প্রতিশোধ সামলাতে পারছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র কতটা ও কোন সীমায় এই যুদ্ধে জড়াবে, সেটিই এখন পুরো অঞ্চলের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।

এমএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।