মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে চলছে সংঘর্ষ, সমুদ্রপথেও ভেসে উঠছে যুদ্ধের ছায়া। ইসরায়েল-ইরান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে নতুন করে সামনে এসেছে এক অশনি সঙ্কেত।
হরমুজ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ হিসেবে পরিচিত। এই জলসীমা দিয়ে প্রতিদিন বৈশ্বিক তেল সরবরাহের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই পরিবহন করা হয়। একে বলা হয় বিশ্বের জ্বালানির লাইফলাইন। আর সেই পথেই যদি তালা পড়ে, তা হলে বিশ্বজুড়ে শুরু হতে পারে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতির অধ্যাপক অ্যাড হার্স বলছেন, এই পথ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল যায়। সৌদি আরব, কুয়েত বা আশপাশের দেশের জন্য এর কোনো বাস্তবসম্মত বিকল্প রুট নেই।
হার্স সতর্ক করে বলেন, যদি প্রবাহ অর্ধেক কমেও যায়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম এক লাফে ১২০ ডলার বা তার বেশি হয়ে যেতে পারে—এবং এই প্রভাব হবে তাৎক্ষণিক ও বৈশ্বিক।
ইরানের সংবাদ সংস্থা জানায়, দেশটির সংসদের নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য এসমায়েল কোসারি বলেছেন, ইসরায়েলের সামরিক হামলার জবাবে হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে ইরান।
হার্স আরও বলেন, যদি ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে, তবে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অর্থনৈতিক আগ্রাসনের মতো হয়ে উঠবে। তার মতে, এমন একটি পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক অভিযানের সংবেদনশীল অজুহাত হিসেবে কাজে লাগাতে পারে।
বড় পরিসরের এই অস্থিরতা শুরু হয় শুক্রবার, যখন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালায়। এতে নিহত হন ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা। জবাবে ইরান চালায় পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
রাতভর দুই দেশের মধ্যে চলে হামলা-পাল্টা হামলা। একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বাত ইয়াম, হাইফা ও গ্যালিলির মতো শহরগুলো। প্রাণ হারান অন্তত ১০ জন, আহত হন শতাধিক। বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে শুধু সামরিক নয়, এক অর্থনৈতিক যুদ্ধও ঘনিয়ে আসছে। তেলের সরবরাহ বন্ধ হলে, শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বব্যবস্থা অস্থির হয়ে পড়বে।
আরএইচ


