ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাজ্যে হাসিনা ঘনিষ্ঠদের পাচার করা অর্থ ফেরাতে চ্যালেঞ্জ কোথায়?

আন্তজার্তিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৫১, জুন ১২, ২০২৫
যুক্তরাজ্যে হাসিনা ঘনিষ্ঠদের পাচার করা অর্থ ফেরাতে চ্যালেঞ্জ কোথায়?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সফর করছেন, যার মূল লক্ষ্য হলো যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া বাংলাদেশি অর্থ ফেরত আনা। এই উদ্দেশ্যে তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।

লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায় খুঁজতে সফরসঙ্গীরা কাজ করছেন। তবে অর্থ ফেরত আনা বাস্তবে কতটা সম্ভব তা নিয়ে দেশে বিতর্ক চলছে।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশিত শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়, পূর্ববর্তী শেখ হাসিনা সরকারের সময় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে, যার বড় অংশ যুক্তরাজ্যে গেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই সফর অর্থ ফেরত আনার প্রয়াসে গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্বল্প মেয়াদে তা আদায় সম্ভব নয়।

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পাচারকৃত অর্থের সাথে বিদেশি বিনিয়োগের সরাসরি যোগসূত্র প্রমাণ করাই বড় চ্যালেঞ্জ।

এ প্রেক্ষাপটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে এবং স্পটলাইট অন করাপশন—এই দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলো যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশে চিঠি ও মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো। এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে যুক্তরাজ্যের সাথে।

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, ব্রিটেনের আইনি কাঠামোর সাথে বাংলাদেশের মিল থাকায় উদ্যোগটি যুক্তরাজ্য থেকেই শুরু হয়েছে। এজন্য যুক্তরাজ্যের কিছু বিশেষায়িত কোম্পানির সহায়তা নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, পাচার হওয়া অর্থ অবৈধভাবে এসেছে এবং কোথায় লগ্নি হয়েছে তা আদালতে প্রমাণ করতে হয়, যা সাধারণত ৫-৭ বছর সময় নেয়। যদিও সময় কমও লাগতে পারে, চাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিশ্লেষকরা প্রধান উপদেষ্টার সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন এবং তার সফরসঙ্গীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে তারা যুক্তরাজ্যকে আরও কার্যকরভাবে অর্থ ফেরতের জন্য প্রস্তুত করতে সক্ষম হন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, স্পটলাইট অন করাপশন ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ বাংলাদেশে ফেরত দিতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তারা দাবি করেছে, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ জব্দ ও পুনরুদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে

বিবৃতিতে টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থ পাচার রোধে যুক্তরাজ্যের উচিত সক্রিয় ভূমিকা রাখা, যাতে স্পষ্ট বার্তা যায় যে, গন্তব্য দেশও পাচারকারীদের দায়মুক্ত রাখে না।

স্পটলাইট অন করাপশনের প্রধান সুসান হাওলি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে সময় না নষ্ট করে অবিলম্বে অর্থ জব্দ ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে এবং দ্য অবজারভারের এক যৌথ তদন্তে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের নামে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি জব্দ করেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে’র পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস এই সম্পদগুলো জব্দ ও তদন্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।