আসামের খণ্ডপুকুরি গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম। ভারতের এ নাগরিক পেশায় শিক্ষক ছিলেন।
খাইরুলের গল্প তুলে ধরেছে ভারতীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম স্ক্রল। প্রতিবেদনে জানানো হয়, সম্প্রতি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। কিন্তু অবসরজীবন শুরু হওয়ার আগেই তাকে ভোগ করতে হয়েছে সীমাহীন যন্ত্রণার পথ। অবশ্য, যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হয়েছে তার। খাইরুল এখন এখন নিজের বাড়িতে, পরিবারের সঙ্গে। তাদের সঙ্গেই ঈদ পালন করেছেন তিনি।
ঈদের দিন তার সঙ্গে কথা বলে স্ক্রল। খাইরুল তখন আফসোস করে বলেন, আদালতে গিয়ে আমি ন্যায় বিচার পাইনি। তবে আল্লাহ নিশ্চয়ই একদিন জুলুমের বিচার করবেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আসামের মুসলমানরা যেন শান্তিতে থাকতে পারে।
গত ৫ জুন বৃহস্পতিবার নিজ গ্রামে ফেরেন তিনি খাইরুল। এর আগে গত ২৩ মে ভোরে ভারতীয় সীমান্ত পুলিশের একটি দল তার বাড়িতে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়। চারদিনের মাথায় আরও ১৩ জনের সঙ্গে তাকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে পাঠানো হয়। পুলিশ তখন দাবি করেছিল, খাইরুলসহ সবাই নাকি বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২৭ মে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের একজন সাংবাদিক ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওতে দেখা যায় খাইরুল কুড়িগ্রাম সীমান্তের একটি মাঠে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখান থেকেই তিনি নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে দেশে ফেরেন।
নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে খাইরুল বলেন, যেভাবে হাত বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, মনে হচ্ছিল আমি চোর! আমি বলছিলাম, আমি শিক্ষক। আমাকে ন্যুনতম সম্মান দিন। কিন্তু কেউ শুনল না। আমাকে চোখ বেঁধে ভোরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, মরিগাঁও জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে মাতিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। কিছুদিন পর বিএসএফ এসে ক্যাম্প থেকে তুলে আমাকে বাংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে দিয়ে যায়। আমি সেখানে দুদিন কোনো সুরাহা ছাড়াই অপেক্ষা করেছি।
খাইরুল আরও জানান, যখন তিনি বুঝতে পারেন তাকে জোর করে সীমান্তে পাঠানো হচ্ছে, তখন তিনি বাসে উঠতে অস্বীকার করেন। বলেন, আমি ভারতীয় নাগরিক, তাহলে আমাকে কেন বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে? জবাবে মাতিয়া ক্যাম্পেই তাকে মারধর করা হয়।
তিনি বলেন, পরে বাংলাদেশের বিজিবি আমাকে উদ্ধার করে তাদের ক্যাম্পে রাখে। এরপর পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয় এবং শেষে আমাকে ভারতীয় সীমান্তে ফেরত পাঠানো হয়। বাংলাদেশে আমি কতদিন ছিলাম, এখন আর স্পষ্ট মনে নেই। মনটা এমন বিপর্যস্ত ছিল যে দিন-রাত গুলিয়ে গিয়েছিল। ঘুম ছিল না চোখে।
খাইরুলের স্ত্রী রিতা খানম বলেন, আমরা সব ধরনের কাগজপত্র নিয়ে পুলিশের কাছে যাই, তাদের জানাই খাইরুল একজন বৈধ নাগরিক। তখন পুলিশ বলেছিল কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেবে। কিন্তু সেটা হয়নি।
খাইরুল বলেন, একজন ভারতীয় নাগরিককে এইভাবে হয়রানি করে নিজ দেশ থেকেই বহিষ্কার করে দেওয়া— এটা অবিচার। আমাদের কাগজপত্র সব বৈধ ছিল। অথচ কোনো যাচাই না করে আমাকে বাংলাদেশে পাঠানো হলো। একদিন এই অন্যায়ের বিচার হবেই।
এর আগে ২০১৬ সালে খাইরুলকে বিদেশি ঘোষণার রায় দিয়েছিল আদালত। ২০১৮ সালে গৌহাটি হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রাখে। এরপর তিনি দুই বছর মাতিয়া ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন। ২০২০ সালের আগস্টে জামিনে ছাড়া পান এবং ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন, যার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।
এমজে