ঢাকা, শনিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিগ বিউটিফুল বিলের কারণে সম্পর্কের অবনতি, ইলনে হতাশ ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২০, জুন ৬, ২০২৫
বিগ বিউটিফুল বিলের কারণে সম্পর্কের অবনতি, ইলনে হতাশ ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সাবেক উপদেষ্টা এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মধ্যে। ট্রাম্পের নতুন একটি ‘কর হ্রাসমূলক’ বিল নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন এই দুই প্রভাবশালী।

একে কেন্দ্র করেই দুই পক্ষের সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হয়ে উঠছে।

গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিশ মের্জের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, ইলন মাস্কের সঙ্গে আমার একসময় দারুণ সম্পর্ক ছিল, তবে এখন আমি নিশ্চিত না— তা ভবিষ্যতেও থাকবে কি না। আমি তার ওপর খুবই হতাশ।

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাম্প অনুমোদিত একটি কর সংস্কার বিল, যেটিকে তিনি অভিহিত করেছেন ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নামে। এই বিল পাসের মাধ্যমে ট্রাম্প দাবি করেছেন, সাধারণ আমেরিকানদের ওপর করের বোঝা ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হবে। ট্রাম্পের মতে, এটি একটি ঐতিহাসিক বিল। যদি এটি পাস না হতো, জনগণের ওপর করের যে বোঝা পড়ত, তার ফলাফল হতো ভয়াবহ। আমি সমস্যা তৈরি করতে আসিনি, এসেছি সমাধান দিতে।

তবে মাস্কের মতে, এই বিল আসলে সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতিকে লঙ্ঘন করে এবং তিনি ও তার সহকারীরা প্রশাসনের ভেতরে থেকে গত কয়েক মাসে যেসব সাশ্রয়ী নীতি চালু করেছিলেন, সেগুলো ধ্বংস করে দেবে। বিলটি পাস হওয়ার আগে তার সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই কংগ্রেসে পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন মাস্ক।

এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় মাস্ক এই বিলের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের আহ্বান জানান। তিনি লিখেছেন, এটি শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর ভবিষ্যতের জন্যও ক্ষতিকর। বিলের বিরোধিতা করে তিনি জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।

মাস্ককে ঘিরে বিতর্কের সূচনা হয় ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় থেকে, যখন রিপাবলিকান প্রচারে তাকে নিয়মিত দেখা যেত। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মাস্ককে নিয়োগ দেন ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বা ডজের প্রধান হিসেবে— যার লক্ষ্য ছিল সরকারি ব্যয়ের লাগাম টানা।

ডজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় মাস্ক একের পর এক পদক্ষেপ নেন— যার মধ্যে ছিল হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই, বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত এবং দেশীয় গবেষণা সংস্থাগুলোতে ভর্তুকি বাতিল। যদিও মাস্কের এই কার্যক্রম শুরুতে প্রশংসিত হয়েছিল, পরবর্তীতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসনের জনপ্রিয়তায়।

এছাড়া কংগ্রেস এখনও ডজকে পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। রিপাবলিকান পার্টির অনেক সিনিয়র নেতাও মাস্কের কর্মকাণ্ডে বিরক্তি প্রকাশ করেন। ফলে মাস্ক ও প্রশাসনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

সবশেষে ট্রাম্পের বিতর্কিত বিল পাসের সিদ্ধান্ত মাস্কের সঙ্গে তার সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতির পথ প্রশস্ত করে। ট্রাম্প এখন মনে করেন, মাস্কের এই বিরোধিতা মূলত ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রণোদিত— কারণ বিলটির সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে মাস্কের মালিকানাধীন কোম্পানি টেসলার ওপর।

অন্যদিকে মাস্ক সরকারি পদ থেকে পদত্যাগ করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন আরও সরাসরি। বিল বাতিলের দাবিতে জনমত গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প ও মাস্কের এই বিরোধ শুধুই অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক নয়, বরং ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ ও ক্ষমতা ভাগাভাগিরও প্রতিফলন। নির্বাচনের সময় একসঙ্গে যাত্রা শুরু করলেও, এখন তারা দুই মেরুতে অবস্থান করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক কাঠামো ও করনীতির গতিপথ যে এই দ্বন্দ্বের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে, তা বলাই বাহুল্য।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।