রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা সরাসরি শান্তি আলোচনা বড় কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। আলোচনায় কেবল আরও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে।
ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল জানায়, রাশিয়া আবারও ‘শর্তহীন যুদ্ধবিরতির’ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে—যা ইউক্রেন ও এর ইউরোপীয় ও মার্কিন মিত্রদের মূল দাবি ছিল। তবে দুই দেশ ১২,০০০ সেনার মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ফ্রন্টলাইনের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় ২-৩ দিনের জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যদিও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
তুরস্কের ইস্তানবুলে হওয়া সোমবারের (২ জুন) এই ঘণ্টা খানেকের আলোচনায় দুই পক্ষ অসুস্থ, গুরুতর আহত এবং ২৫ বছরের কম বয়সী যুদ্ধবন্দিদের বিনিময়ে সম্মত হয়েছে।
রুশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, রাশিয়ার দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে—
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নেওয়া। রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা এই চার অঞ্চল এবং ক্রিমিয়াকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া। ইউক্রেনের কোনো সামরিক জোটে যোগ না দেওয়ার নিশ্চয়তা। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত করা। রুশ ভাষাকে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। রাশিয়ার ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
এইসব শর্তকে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরহি কিসলিৎসিয়া জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিও নাকচ করেছে।
এছাড়া ইউক্রেন এমন শিশুদের তালিকাও রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছে, যাদের তারা বলছে—বলপ্রয়োগে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিয়েভ আশা করছে, জুনের শেষ নাগাদ রাশিয়া তাদের প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক জবাব দেবে। যদিও এখনো প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ভ্লাদিমির পুতিনের সরাসরি আলোচনার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
রুশ প্রতিনিধি দলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি জানিয়েছেন, অসুস্থ, আহত ও ২৫ বছরের কম বয়সী যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় করা হবে। পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে রাশিয়া ৬,০০০ ইউক্রেনীয় সেনার মৃতদেহ কিয়েভের কাছে হস্তান্তর করবে। জেলেনস্কিও জানিয়েছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার ৬,০০০ সেনার মরদেহ ফেরত দেবে—যদিও নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি।
রাশিয়া এখনো শর্তহীন যুদ্ধবিরতি মেনে নিচ্ছে না। তারা বলছে, আলোচনার মাধ্যমে ‘স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে—যার অর্থ, বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের আত্মসমর্পণের পথে ঠেলে দেওয়া।
লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, যতক্ষণ না রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধ শেষ করার বাস্তব সংকেত আসে, ততক্ষণ আমাদের প্রতিরক্ষা আরও জোরদার করা জরুরি। তিনি রাশিয়ার ওপর নতুন করে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।
সূত্র: বিবিসি
এমএম