ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যদি ইসরায়েল হামলা চালায়, তাহলে তার দায়ভার যুক্তরাষ্ট্রকেও নিতে হবে।
তার এই মন্তব্য এসেছে সিএনএনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর, যেখানে দাবি করা হয়েছে ইসরায়েল ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসা নতুন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছেন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা।
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের নেতৃত্ব এখনও হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। আসলে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের অভ্যন্তরেই এ নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে যে ইসরায়েল আদৌ হামলা করবে কি না।
এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তেহরানের চলমান আলোচনার ফলাফল কী হয়, তার ওপর অনেকটা নির্ভর করছে।
কেবল ইসরায়েলি নেতাদের প্রকাশ্য ও গোপন হুমকি নয়, ইসরায়েলি গোপন যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়িপাতা খবর ও তাদের সামরিক তৎপরতা একটি সম্ভাব্য হামলার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র।
মার্কিন গোয়েন্দাদের ভাষায়, ইসরায়েল আকাশপথে হামলার গোলাবারুদ সরানোর কাজ করছে এবং একটি বড়সড় বিমান মহড়া সম্পন্ন করেছে, যা হামলার প্রস্তুতিরই অংশ হতে পারে।
তবে একইসঙ্গে বিশ্লেষকেরা এ কথাও বলছেন যে, এই তৎপরতাগুলো হয়তো কেবল ইরানের ওপর চাপ তৈরির কৌশল হিসেবেও হতে পারে— যেন তেহরান তাদের পারমাণবিক কার্যক্রমে ছাড় দিতে বাধ্য হয়।
সিএনএন জানিয়েছে, তারা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছে। তবে ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস কোনো মন্তব্য করেনি।
এই পরিস্থিতির মধ্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার পঞ্চম দফা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে শুক্রবার (২৩ মে)।
আলোচনার মূল বিরোধের বিষয় হলো ইরানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, যা যুক্তরাষ্ট্রের মতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ খুলে দিতে পারে। তবে তেহরান বরাবরই দাবি করে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস-কে পাঠানো এক চিঠিতে আরাগচি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন বা বেআইনি কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে ইরান দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইসরায়েলি হুমকি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, অন্যথায় ইরান নিজের পারমাণবিক স্থাপনা রক্ষায় ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নিতে বাধ্য হবে।
আরাগচি স্পষ্ট করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের হামলায় অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হবে, কারণ ইসরায়েলের প্রধান মিত্র হিসেবে ওয়াশিংটনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গৃহীত পদক্ষেপের ধরন, ব্যাপ্তি ও কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে হবে।
সূত্র: আল জাজিরা, সিএনএন
এমএম