ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্লট হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সাবেক সিটিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বাংলাদেশের একটি আদালত।
আজ রোববার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বিচারক মোহাম্মদ জাকির হোসেন টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
টিউলিপকে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করার জন্য ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়সীমার মধ্যে তিনি আদালতে উপস্থিত না হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য শুরু হতে পারে। আদালত জানায়, আত্মসমর্পণ না করলে বিদেশি কোনো মামলায় টিউলিপ পলাতক হিসেবে বিবেচিত হবেন।
আর এমনটি হলে নিজ ভূমিতে বিচারের জন্য ব্রিটেনের কাছে টিউলিপকে ফেরত চাইতে পারবে বাংলাদেশ।
রোববার (১৩ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
একইরকম তথ্য দিয়ে রোববার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে টিউলিপের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা সম্পর্কে টিউলিপ সিদ্দিকের খালা। শেখ রেহানার মেয়ে তিনি। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় এ পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানেননি টিউলিপ। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে তিনি এ বিষয়ে অবহিত হন।
টিউলিপের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাবিত করার মাধ্যমে ঢাকার অভিজাত এলাকায় ৭ হাজার ২০০ স্কয়ার ফুটের একটি প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সন্তান এবং নিকটাত্মীয়দের মধ্যে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমি বরাদ্দ করেছেন—এমন অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ এবং অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রীয় জমি ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগগুলো ভিন্ন। তবে রূপপুরকাণ্ডেও রয়েছে টিউলিপের নাম।
টেলিগ্রাফ জানায়, টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে সিটিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় তাকে।
এদিকে টিউলিপের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন তার এক মুখপাত্র। রোববার দুপুরে টেলিগ্রাফকে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে দুদক টিউলিপের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছে, যেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং টিউলিপের আইনজীবীরা লিখিতভাবে সেগুলোর সমাধান চেয়েছেন। কিন্তু দুদক এর কোনো উত্তর দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, ঢাকার আদালতে নিজের বিষয়ে কোনো শুনানি বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে অবগত ছিলেন না টিউলিপ।
এদিকে রোববার টিউলিপকে এমপি পদ থেকে পদত্যাগ এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে লেবার পার্টি থেকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন কনজারভেটিভরা। কনজারভেটিভদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, স্টারমার এমন একজনকে দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। অবিলম্বে তার এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। স্টারমারকে অবশ্যই টিউলিপের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতাকে একপাশে রাখতে হবে।
হান্টিংডনের টোরি এমপি বেন ওবেস-জেক্টি বলেন, স্টারমার আগেই মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি টিউলিপকে পুনরায় স্বাগত জানাবেন। টিউলিপের আচরণ নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন উঠলেও তিনি কীভাবে আগের ভূমিকায় ফিরতে পারেন?
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
এসএএইচ