ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪৩২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

৯২ শতাংশ মানুষ মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা নেয় না

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৩, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
৯২ শতাংশ মানুষ মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা নেয় না

দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিতে যায় না বলে একটি সেমিনারে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সেমিনার রুমে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের আয়োজনে ‘বিপর্যয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন।

গোলটেবিল বৈঠকটিতে সহযোগিতা করে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি লিমিটেড।

কালের কণ্ঠ সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের (বিএপি) সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. নিজামউদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আরিফুজ্জামান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুনতাসীর মারুফ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (সেলস) আশরাফ উদ্দিন আহমেদ, আল-মানার হাসপাতাল, মোহাম্মদপুরের মনোরোগ বিভাগের সিনিয়র প্রধান পরামর্শদাতা অধ্যাপক ডা. মো. আসাদ-উজ-জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মো. শাহানূর হোসেন প্রমুখ।

হাসান হাফিজ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা তথাকথিত শিক্ষিত হয়েও সচেতন না। দুনিয়া থেকে আমরা অনেক পেছনে পরে আছি। উপনিবেশের দাসত্বের পরম্পরা আমরা এখনো বহন করে চলেছি। আমাদের সেই ট্যাবু ভাঙতে হবে। মানসিকভাবে আমরা সুস্থ না হলে যতই উন্নয়ন করি না কেন আমাদের কোনো লাভ হবে না।

অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি লাখ মানুষের জন্য দশমিক দুই জন সাইকিয়াট্রিস্ট আছেন। মেন্টাল হেলথ নার্স আছেন মাত্র দশমিক পাঁচ জন, ক্লিনিক্যাল এবং কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট আছে দশমিক তিন শতাংশ। অন্যান্য মেন্টাল হেলথ ওয়ার্কার আছে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। প্রতি লাখে মোট মেন্টাল হেলথ ওয়ার্কার আছে এক দশমিক তিন শতাংশ।

মানসিক স্বাস্থ্যের বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের টোটাল হেলথ বাজেটের দশমিক ৪৪ শতাংশ মেন্টাল হেলথের জন্য বরাদ্দ। এই বরাদ্দের আবার ৬৭ শতাংশ চলে যায় শুধু দুইটা হাসপাতালে। একটা পাবনা মেন্টাল হসপিটাল, আরেকটা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। বাকি ৩৩ ভাগ যাচ্ছে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে, ডিসট্রিক্ট হাসপাতালে, অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজে। আমাদের জেলা সদর হাসপাতালে কোন সাইকিয়াট্রিস্ট নাই। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিজনে কত বরাদ্দ সেটা আমরা হিসাব করতেই পারি না।

অধ্যাপক ডা. মো. নিজামউদ্দিন বলেন, সাইকিয়াস্ট্রিস্টদের পাগলের ডাক্তার, পাগলের সাবজেক্ট বলে তকমা জুড়ে দিয়ে অন্যরা এখান থেকে সুবিধা নিচ্ছে। সুতরাং আমাদের এই বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আমাদের দেশের সাইকিয়াট্রিস্টদের স্বল্পতার একটা কারণ পাগলের ডাক্তার, যেটা সমাজে পরিচয় দেওয়াও সমস্যা।

মো. শাহানূর হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মেন্টাল হেলথের প্রধান সমস্যা ৯২ শতাংশ মানুষ মেন্টাল হেলথের চিকিৎসা নেয় না। এখনো যে ৯২ শতাংশ মানুষ মেন্টাল হেলথের চিকিৎসা নিতে যায় না, তার প্রেক্ষাপট হচ্ছে সামাজিক স্টিগমা। মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে, যদি কারও মানসিক সমস্যা হয়, এটা প্রকাশ করা যাবে না। প্রকাশ করলে আমার ছেলে-মেয়ের বিয়ে হবে না। আমরা সমাজের স্টিগমাটাইজ হব। এই কারণে মানুষ মানসিক সমস্যা লুকিয়ে রাখে।

সেমিনারে থেকে আরও জানানো হয়, সারা দেশে মোট জনসংখ্যার বিপরীতে মাত্র ৪০০ মতো সাইকিয়াট্রিস্ট রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে যৎসামান্য। সবাই কার্ডিওলজিস্ট হতে চায়, কিন্তু সাইকিয়াট্রিস্ট হতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হতে চাইবে, কিন্তু সাইকিয়াট্রিস্ট হতে চায় কি না? সারাবিশ্বেই সাইকিয়াট্রিস্ট অনেক পাওয়ারফুল সাবজেক্ট কিন্তু বাংলাদেশে সেটা লেস প্রায়োরিটাইজ সাবজেক্ট। সুতরাং এটাকে প্রায়োরিটির মধ্যে আনতে হবে। সরকারকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে।

সেমিনারে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব এবং চিকিৎসা বিষয়ে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

আরকেআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।