ঢাকা, সোমবার, ২ ভাদ্র ১৪৩২, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ সফর ১৪৪৭

ফুটবল

বাংলাদেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলাই স্বপ্ন, সাক্ষাৎকারে কিউবা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৯, আগস্ট ১৭, ২০২৫
বাংলাদেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলাই স্বপ্ন, সাক্ষাৎকারে কিউবা কিউবা মিচেল । ছবি: রাকিব উদ্দীন

এবারের দলবদল মৌসুমের সবচেয়ে বড় নাম কিউবা মিচেল। ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলা এই ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম সফল ক্লাব বসুন্ধরা কিংস।

ইতোমধ্যেই এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের বাছাই পর্বের ম্যাচে বসুন্ধরার জার্সিতে অভিষেক হয়েছে কিউবার।  

বদলি নেমেই নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে জাত চিনিয়েছেন এই তরুণ ফুটবলার। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেওয়া কিউবার চোখ এখন জাতীয় দলে। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে যেতে চান বিশ্বকাপের মঞ্চে। বাংলানিউজকে তিনি জানিয়েছেন তার বাংলাদেশে আসা এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে:

বাংলানিউজ- হঠাৎ করেই বাংলাদেশের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে যোগ দিয়ে আলোড়ন তুললেন। অভিষেক ম্যাচেও জয় পেলেন কেমন লাগছে?
কিউবা- এটা বেশ অবাক করার মতোভাবেই হঠাৎ করেই হয়ে গেল। খুব দ্রুত সব কিছু হয়েছে। বেশ ভালো লাগছে।

বাংলানিউজ- বসুন্ধরা কিংসের কিভাবে যোগ দিলেন?
কিউবা- বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানেরপরিকল্পনা আমার ভালো লেগেছে। প্রথম যখন আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখনই তারা যে প্রকল্পের কথা বলেছিল, সেটাতে আমি ছিলাম একজন তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে, যাকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তোলা হবে। তারা আমাকে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে দেখতে চায়। এই ধরনের প্রজেক্ট অন্য কোনো ক্লাব দেয়নি, তাই এটিই আমাকে রাজি করিয়েছিল।

বাংলানিউজ- প্রথমেই বলুন, আপনি কীভাবে বাংলাদেশি হলেন তার পেছনের গল্পটা। কে আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং কার মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছিল?
কিউবা- অবশ্যই প্রথম যে জিনিসটা আমি দেখেছিলাম, সেটা হলো হামজাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখা। এটা দেখে, আমি মনে করি ইংল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে যারা বংশগতভাবে বাংলাদেশের, তাদের অনেকেই এটা করতে চেয়েছে। আমিও তাদের একজন ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, হ্যাঁ, এটা আমি করতে চাই। এরপর অনেক ভালো ইনস্টাগ্রাম পেজ যেমন ‘সেভ বাংলাদেশ ফুটবল’ ওরা আমার অজান্তেই আমার সম্পর্কে প্রচার করেছে, যে আমার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, আমার এখানে খেলার সম্ভাবনা আছে। তারপর ফেডারেশন থেকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসে। সেই সময় থেকেই আর পেছনে ফিরে তাকাইনি। আমি জানতাম আমি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। এভাবেই পুরো ব্যাপারটা ঘটেছিল।

বাংলানিউজ- আপনি ফুটবলার হলেন কীভাবে? কে আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?
কিউবা- আমার পরিবারে সবসময় ফুটবলের চর্চা ছিল। আমার বাবা ফুটবল খেলতেন, উনি লিভারপুলের একজন বড় ভক্ত, এবং আমার পরিবারেও সবাই তাই। তাই ওই পরিবেশে বড় হওয়া। যখন আমি ৫ বা ৬ বছর বয়সী তখন একটি স্থানীয় দলে যোগ দিই। এরপর থেকে ফুটবলই ছিল সবকিছু। স্কুল থেকে ফিরে এসে ফুটবল খেলা, ট্রেনিং না থাকলে পার্কে যাওয়া এটা একটা রুটিন ছিল। আমি ফুটবলকে ভালোবাসতাম এবং সবসময় সেটাই করতে চেয়েছি।

বাংলানিউজ- শুরুতে কোন কোচ আপনাকে গাইড করেছিলেন? আপনার পছন্দের কোনও কোচ আছে?
কিউবা- শুরুতে কোনো নির্দিষ্ট একজন না, তবে স্থানীয় দলে দুইজন কোচ ছিলেন যারা আমাকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন। তারপর যখন বার্মিংহ্যামে গেলাম, তখন অনেক ভালো কোচের সংস্পর্শে এসেছি। কিন্তু কাউকে আলাদা করে বলব না। সবাই তাদের মতো করে আমাকে গড়ে তুলেছেন এবং আমি এখন যে খেলোয়াড় হতে যাচ্ছি, তাতে তাদের অবদান আছে।

বাংলানিউজ- বাংলাদেশ ফুটবলে আপনি যুক্ত হওয়ার পর থেকে কি কারও পারফরম্যান্স লক্ষ্য করেছেন? আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে?
কিউবা- হ্যাঁ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর থেকেই আমি দলের খেলা দেখা শুরু করি। আমি মনে করি আমি অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ কোয়ালিফায়ারের একটা খেলা দেখছিলাম। আমি সবসময় খেলা দেখি, যাদের সঙ্গে খেলব, এবং যারা আগামীতে আসছে, তাদেরও। এমনকি যখন আমি কিংসে যোগ দিইনি তখনও আমি বিপিএলের খেলা দেখার চেষ্টা করতাম। আমি যতটা সম্ভব বাংলাদেশি ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি।

বাংলানিউজ- আমরা ফরোয়ার্ড পজিশনে একটু পিছিয়ে আছি। আপনি আর হামজা কি আমাদের আক্রমণভাগকে আরও শক্তিশালী করতে পারবেন?
কিউবা- হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি মনে করি আমরা আগ্রাসী মনোভাবের ফুটবলার। হামজা সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার, আমিও তেমনটাই। দুজন মিলে গেলে মিডফিল্ড আরও শক্তিশালি হবে। আশা করি, যদি আমরা নিজেরা গোল করতে না পারি, তাহলে অন্যদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারব। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি ওদের সঙ্গে খেলার জন্য। আশা করি আমরা গোলের অভাব দূর করতে পারব।

বাংলানিউজ- আপনি জানেন, বসুন্ধরা কিংস পরপর পাঁচবার লিগ জিতেছে। আপনি কি মনে করেন, আপনি দলে এমন কিছু যোগ করতে পারবেন যা দলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগিয়ে নেবে?
কিউবা- হ্যাঁ, আমাদের প্রধান লক্ষ্য অবশ্যই লিগ জেতা। যদি না জিতি, তবে সেটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা হবে। তবে আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে ভালো করা। আমি মনে করি সেখানেই আমি নিজের প্রতিভা দেখাতে পারব এবং দলকে এশিয়ান পর্যায়ে এগিয়ে নিতে পারব।

বাংলানিউজ- আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন..
কিউবা- আমার মা সিলেট থেকে, সেখান থেকেই আমার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক। মা নানাবাড়ি সিলেটে থাকতেন। আমার বাবা জ্যামাইকান ও ইংলিশ, উনার বাবা-মাও জ্যামাইকান ছিলেন এবং পরবর্তীতে ইউকে এসেছেন। আমার এক ছোট বোন আছে, কিন্তু মেয়েরা ফুটবল পছন্দ করে না। আমার বাবা ফুটবল খেলতেন এবং আমাকে ফুটবলের প্রতি আগ্রহী করেছেন। তিনিও আমার বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। এটা এমন না যে আমার বিভিন্ন জাতিগত পরিচয়ের মধ্যে দ্বিধা ছিল আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সবাই তা মেনে নিয়েছে।

বাংলানিউজ- শেষ প্রশ্ন, জাতীয় দল এবং ক্লাবের হয়ে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী?
কিউবা- আমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলা। আমি বিশ্বাস করি, আমরা পরবর্তী কয়েক বছরে কিংবা তার পরের সময়েও বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করতে পারি। এটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন হবে। এমনকি যারা ফুটবল পছন্দ করে না, তাদের জন্যও। ক্লাবের ক্ষেত্রে, প্রথম লক্ষ্য লিগ জয়, তারপর আরও বড় এশিয়ান প্রতিযোগিতায় ভালো করা। এখন এই লক্ষ্যগুলোর দিকেই আমার মনোযোগ।

এআর/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।