কাটারিভোগ চাল আর পাপড়ের জেলা দিনাজপুর। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের লীলাভূমি এ জেলায় আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেরাকোটার স্থাপত্য নির্দশন কান্তজির মন্দির।
শুধু স্থাপত্য নিদর্শন নয়। এই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাড়া ভেদে বাস করে নানা ভাষাভাষীর আদিবাসীরা। সাঁওতাল, মুণ্ডা, মাহালী, তুরি ছাড়াও এখানে টিকে আছে কড়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার। দারিদ্রের কষাঘাতে তাদের অধিকাংশই আজ ধর্মান্তরিত। যারা জাত-ধর্মকে এখনও আঁকড়ে আছে তারাও অর্থাভাবে পারছে না নিজেদের আদি রীতিগুলোকে ধরে রাখতে। ফলে আদিবাসীরা দিনে দিনে হারিয়ে ফেলছে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি আর আচারগুলোকে।
একইভাবে আকাশসংস্কৃতি আর ডিশ কালচারের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দিনাজপুরের গ্রাম-বাঙলার আদি সংস্কৃতি আর নানা আয়োজন। তবে দিনাজপুরের বিরল উপজেলা এ থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম। এখানে এখনও রাতের পর রাত চলে কবিগানের লড়াই। মেয়েলী গীতের আয়োজন চলে বিয়ে কিংবা মুসলমানির অনুষ্ঠানে। মহিষের দৌড়, আদিবাসীদের তীর-ধনুক খেলা, হাড়ি ভাঙ্গা, কলা গাছে ওঠা, দাড়িয়াবান্ধা খেলা, খেমটা নাচ, তুমগি আর পাতা খেলার আয়োজন চলে প্রতি ডিসেম্বরে। এ ধরণের উৎসব চলে নবান্ন ও বিজয়ের আনন্দকে ঘিরে। এ বছর এ গ্রামে, তো ওই বছর ওগ্রামে। পাড়ায় পাড়ায় চলে উৎসবের আয়োজন। হতাশা আর বিভেদ ভুলে হাতে হাত মেলায় আদিবাসী আর বাঙালিরা।
গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে এমন মহতী উদ্যোগের আয়োজক কারা? কোনও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নয়, ৮ বছর ধরে বিরল উপজেলায় এমন আয়োজন করে আসছে `হামেরা দিনাজপুরিয়া ` নামের একটি সংগঠন। এবারও গত ৬ ডিসেম্বর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় এ ধরনের আয়োজন আনন্দে মাতিয়েছে বিরলবাসীকে।
বিরলে ২০০৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারা। যার চিন্তা ও উদ্যোগে হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনটি আলোর মুখ দেখে তিনি বিরল প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক এম এ কুদ্দুস। একই সাথে তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবিসর্দার। 
তিনি বলেন, ‘গ্রাম বাংলার আদিবাসী ও বাঙালিদের নানা খেলা, গান আর কৃষ্টি কালচার যা আমাদের একান্তই নিজেস্ব। সেগুলোকে পরবর্তী প্রজম্মের কাছে তুলে ধরাই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য। প্রথম প্রথম অনুষ্ঠান আয়োজন করতে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ছিল আর্থিক সীমাবদ্ধতা। কিন্ত এখন স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় হামেরা দিনাজপুরিয়ার উৎসবটি এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান হিসেবে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। ’
একই সঙ্গে এ অনুষ্ঠনের আয়োজনে কাজ করছে তুরুণ ও যুবকরা।  যারা নিজেদের মনে লালন করছে বাঙালি সংস্কৃতিকে। এমএম কুদ্দুস জানালেন, ভবিষ্যতে এ সংগঠনের মাধ্যমে গোটা দিনাজপুরে কাজ করবেন তারা। 
প্রতিবছরের মতো এবারও গত ৬ ডিসেম্বর বিরলের বোর্ডহাটে আয়োজন করা হয় হামেরা দিনাজপুরিয়ার উতসবটি।  আদিবাসী-বাঙালিদের মিলন মেলা বসেছিল এোনে সেদিন।  স্থানীয় সাংসদসহ দিনাজপুরের সুধীসমাজের পদচারণায় প্রাণ দিনব্যাপি প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছিল অনুষ্ঠানটি। 
www.salekkhokon.me
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ০৭ নভেম্বর, ২০১১


 
                                             
                 
                 
                 
                 
                 
                 
                 
                 
                