ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার

৭ম পর্ব

কিরীটেশ্বরী মন্দির ও জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রম

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪:১২, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
কিরীটেশ্বরী মন্দির ও জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রম মুর্শিদাবাদের পথে পথে

মুর্শিদাবাদ ঘুরে: কিরীটেশ্বরী মন্দির হচ্ছে সনাতন ধর্মের একটি পবিত্র তীর্থস্থান। ভাগীরথী নদীর ওপারে রয়েছে মুর্শিদাবাদের লালবাগ কোর্ট রোড রেলওয়ে স্টেশন।

এই স্টেশনের লেভেল ক্রসিং পার হয়ে গ্রামের আ‍ঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে আরও প্রায় চার কিলোমিটার গেলেই কিরীটকণা গ্রাম। এ গ্রামটি মুর্শিদাবাদের অন্যতম প্রাচীন স্থান।

  

কিরীটেশ্বরী মন্দিরে প্রধান ভবন

পাঠান-মুঘল শাসনকালেও এই স্থানের খ্যাতি ছিলো। যদিও আজ তার কিছুই নেই। মুর্শিদাবাদের আর দশটা গ্রামেরই মতোই জীর্ণ ও দরিদ্র একটি গ্রাম।  

সনাতন ধর্ম মতে, দক্ষ যজ্ঞে সতীর দেহ একান্ন অংশে বিভক্ত হয়ে ভারতবর্ষের নানা স্থানে পতিত হয়েছিল। এই গ্রামে কিরীটের একটি কণা পড়েছিল বলে এই গ্রামের নাম কিরীটকণা ও মন্দিরের নাম কিরীটেশ্বরী। এই মন্দিরে কোনো প্রতিমা নেই।

রাজবল্লভের শিব মন্দির

এখানকার প্রাচীন যে মন্দির তা এখন ভগ্নপ্রায়। কালের সাক্ষী হয়ে কেবল দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি স্তম্ভ। যতোদূর জানা যায়, কিরীটেশ্বরীর মূল মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল পঞ্চদশ শতাব্দীরও আগে। এরপর ১৭৫৬ সালে দর্পনারায়ণ এই মন্দিরের কিছু সংস্কার করেছিলেন। কথিত রয়েছে, এই মন্দিরের পিছনে যে দু’টি শিবমন্দির রয়েছে, তা রাজা রাজবল্লভ প্রতিষ্ঠা করেছেন।  

এখানে দু’টি পাথরখণ্ড দেখা যায়, যার উপরে বসে রাজা রামকৃষ্ণ সাধনা করতেন। তিনি নাটোর থেকে মুর্শিদাবাদে গিয়ে এ সাধনায় মনোনিবেশ করতেন।  

কিরীটেশ্বরী মন্দির

এ মন্দিরে পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবার দেবীর নামে মেলা হয়। সে মেলায় মুর্শিদাবাদ ও আশপাশের জেলা থেকেও ভক্তরা আসেন। মন্দিরের সামনেই রয়েছে বড় একটি মাঠ। মন্দিরে একটি উঁচু পাথরের বেদী রয়েছে; তার উপর আবার আরেকটি ছোট বেদী। এটিকেই দেবীর কিরীট বলে ভক্তরা পূজা করে। পাশে আরও কয়েকটি মন্দির রয়েছে যা অনেক প্রাচীন। ছোট ছোট মন্দিরগুলো একেকটি একেক জন দেব-দেবীকে উৎসর্গ করে নির্মিত।  

ধ্বংসপ্রাপ্ত কিরীটেশ্বরী মন্দিরে একাংশ 

সনাতনীরা এ মন্দিরকে অনেক জাগ্রত মন্দির মনে করে। এছাড়া এ মন্দির সম্পর্কে আরও অনেক কথাই জানা যায়। মুর্শিদাবাদের প্রাচীন স্থাপত্য ইতিহাসের অন্যতম হচ্ছে এই মন্দির। এ মন্দিরের বয়স কতো তা সঠিক জানা যায় না। তবে এর বয়স কমপক্ষে পাঁচশো বছর হবে। কোনো কোনো তথ্যসূত্রে এর বয়স আরও বেশি বলে মনে করা হয়।  

জগদ্বন্ধু সুন্দরের মন্দির ও আশ্রম

কিরীটেশ্বরী মন্দির দিয়ে আরও দুই-কিলোমিটার গেলে হাতের বামে চোখে পড়বে আরও একটি আশ্রম ও মন্দির। মুর্শিদাবাদে রয়েছে এরকম অসংখ্য মন্দির ও আশ্রম।  

জগদ্বন্ধু সুন্দরের মন্দির ও আশ্রম

এই মন্দিরের নাম ‘হরিপুরুষ জগদ্বন্ধু মহাউদ্ধারণ, চারিহস্ত চন্দ্রপুত্র হাকীটপতন, প্রভু প্রভু প্রভু হে’। আশ্রমের সামনেই রয়েছে বিরাট একটি উঁচু গেট। গেটটির সংস্কার চলছে। মন্দিরের উত্তরপাশেই রয়েছে বড় একটি পুকুর, তার ওপারে আশ্রমের ভবন।  

জগদ্বন্ধু সুন্দরের মন্দির ও আশ্রম

ধবধবে সাদা রঙের এ মন্দির ভবনটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। চারপাশে ফাঁকা একটি হলরুমের মতো। ভেতরে ঢুকে সামনে এগুলেই দেখা যাবে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের একটি ছবি সম্বলিত মঞ্চ। মঞ্চের বাইরে বসে চার ভক্ত হরিনাম জপ করছেন।  

মুর্শিদাবাদে এরকম আরও অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ও মন্দির রয়েছে যেখানে ভক্তকুল ধ্যান-জ্ঞান সাধনা করে নিজেকে ধন্য মনে করে। সেই সঙ্গে তারা মহাপ্রভুর নামভজনে নিজেকে সঁপে দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
এসএনএস

আগের পর্ব পড়ুন-
** ১ম পর্ব: এক যে ছিলো মুর্শিদাবাদ
** ২য় পর্ব: কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ
** ৩য় পর্ব: মানুষ যে হায় ভুলে গেছে চির মধুর ভালোবাসা
** ৪র্থ পর্ব: চার ভাইয়ের বাগান বিলাস ও একটি গুপ্তপথ

** ৫ম পর্ব: জগৎশেঠকে সপরিবারে হত্যা করা হয় যে প্রাসাদে
** ৬ষ্ঠ পর্ব: নুরলদীনের ‘জাগো বাহে’ শোনা যায় নসীপুর প্রাসাদে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।