মৌচাকের ছোট ছোট ঘরগুলো মধুর রসে পরিপূর্ণ করছে। ফুলের চারপাশে মৌমাছিদের আনাগোনা; গুনগুন শব্দে গান।
এই গল্প মৌলভীবাজারের শিক্ষিত চাষী হুমায়ূন কবিরের মৌ বাগানের। তার বাড়ি সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের বোরোতলা গ্রামে। মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বোরোতলায় বাগানটির অবস্থান। নয় ভাইবোন মিলে যৌথভাবে নিজেদের জমিতে এই কাজ করছেন তারা।
হুমায়ূন কবির বাংলানিউজকে জানান, এইচএসসি পাসের পর ব্যবসায়িক ভাবনা থেকে বসতবাড়ির পাশের নিজস্ব পাহাড়ি জমিতে ১৯৯২ সালে লিচু গাছ রোপণ করেন। ওই সময় প্রায় দুই কিয়ার (৬০ শতক) জমিতে ৬৫টি গাছের মধ্যে ৬০টি গাছ বাঁচে। ৬০টি গাছে ৪ বছর পর থেকেই লিচু ধরা শুরু করে।
হুমায়ূন কবিরের মধু চাষের গল্প এখান থেকেই শুরু হয়। লিচুবাগানে আর কী করা যায় এ নিয়ে ভাবনাচিন্তার এক পর্যায়ে তার পরিচয় হয় দিনাজপুরের মধু বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাইফুল্লাহ আহমদের সাথে। তার উৎসাহেই দিনাজপুর জেলার গাজীপুরে মধুচাষের ওপর বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তিনি মধু চাষের বিশেষ পদ্ধতি, বাক্স বানানো এবং রানি মৌমাছি দিয়ে কীভাবে মধু চাষ করা যায় এবিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে মধু রানি পোকা এবং মধুঘর (বাক্স) ও আনুষঙ্গিক উপকরণ বাবদ তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। এরপর মধু সংগ্রহের জন্য লিচু গাছের নিচে লোহার স্ট্যান্ড দিয়ে ৪০টি মৌমাছির বাক্স বসান। এই বাক্সগুলোতেই প্রতিদিন মৌমাছিরা লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এনে জমা করছে। ওই মওসুমে নিজস্ব পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত খামার থেকে তিন মণ মধু উত্তোলন করে এক মণ বিক্রি করেছেন বলে জানান হুমায়ুন। তিনি সংগৃহীত মধু কেজিপ্রতি সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মূল্যে বিক্রয় করেন। এভাবে বছওে তিনি লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকেন।
হুমায়ূন কবির জানান, মধু নিয়ে বাণিজ্যিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি গরুর খামার, হাইল হাওরের পদ্মফুলে মধু চাষ এবং আনারস বাগানের ফুলে মধু চাষ করবেন।
তিনি বললেন, তার সবচে বড় মূলধন হলো ৯ ভাইবোন। সবাই একত্রে মিলে এই বিরাট পরিকল্পনাটি হাতে নিয়েছেন।
লিচু ছাড়াও তার বাগানে বাউকুল, আপেলকুল, পেয়ারা, কাঁঠালসহ ফলজ ও বনজ অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে। তিনি জানান, দিনারপুর চা বাগানের বাংলোয় কিছু রানি মৌমাছি তিনি দিয়েছেন চা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে আনারস গাছের মধ্যে মধুর চাষ করার জন্য।
বাংলাদেশ সময় ১৫৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১১