ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

হারিয়ে যাওয়া বিমান রহস্য-১

মেহেদী হাসান প্রিন্স | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৫৬, মে ৩০, ২০১৪
হারিয়ে যাওয়া বিমান রহস্য-১

৮ মার্চ দিনের শুরুতে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিংয়েন উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় মালয়েশিয়া এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ৩৭০। বোয়িং কোম্পানির তৈরি ৭৭৭ মডেলের অত্যাধুনিক এ বিমানটি সকাল সাড়ে ৬টায় বেইজিং পৌঁছানোর কথা থাকলেও যাত্রা শুরুর একঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ হয়।

এসময় বিমানটিতে ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু ছিল। বিমান উধাও হওয়ার ঘটনাগুলোর মধ্যে ফ্লাইট ৩৭০ সর্বশেষ। পৃথিবীর শত কোটি মানুষের মনে আজ প্রশ্ন , বিমানটি কোথায় গেল? কি হয়েছে ২৩৯ যাত্রী ও ক্রুর ভাগ্য? কোনো প্রকার চিহ্ন ছাড়াই কীভাবে হারিয়ে গেল বিমানটি আধুনিক এভিয়েশন প্রযুক্তির যুগে?

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল নয়। আরও বেশকিছু বিমান উধাও হওয়ার ঘটনা আছে যা আজ পর্যন্ত অমীমাংসিত।


ফ্লাইং টাইগার লাইন ফ্লাইট ৭৩৯
‘ফ্লাইং টাইগার লাইন ফ্লাইট ৭৩৯’ ছিল ইউএস সেনাবাহিনীর কার্গো বিমান। ১৯৬২ সালের ১৬ মার্চ ৯৩ জন ইউএস সেনা ও তিনজন ভিয়েতনামি নিয়ে ট্রাভিস এয়ার ফোর্স বেস, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সাইগোন, ভিয়েতনামে যাত্রা শুরু করে। পথে অ্যান্ডারসন এয়ার ফোর্স বেস, গুয়াম থেকে জ্বালানি পূর্ণ করে ক্লার্ক এয়ার বেস, ফিলিপাইনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু ক্লার্ক এয়ার বেসে পৌঁছাতে পারেনি বিমানটি। পরবর্তীতে ১৩শ’ সেনাবাহিনী সদস্য প্রায় দুই লাখ বর্গমাইল এলাকজুড়ে  শত খোঁজাখুঁজি করেও বিমানের কোনো ধ্বংসাবশেষ পায় নি। বিমানটি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর একজন লাইবেরিয়ান ট্যাংকার জাহাজের ক্রু নাকি আকাশে বড় রকমের আলোকছটা দেখেছিলেন। কিন্তু বিমানের কোনো ধ্বংসাবশেষ পাওয়া না যাওয়ায় সঠিক কারণ আজও অজানা।


ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজ
ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজের নিবন্ধন করা ‘স্টার ডাস্ট’ ছিল Lancaster বোম্বার বিমানের একটি বেসামরিক সংস্করণ । ২ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে বুয়েন্স আয়ার্স থেকে সান্তিয়াগোর উদ্দেশে ছিল বিমানটির শেষ যাত্রা। নিখোঁজের প্রায় ৫০ বছর পরে আন্দিজ পর্বতমালার তুপুঙ্গাত পর্বতের হিমবাহে দু’জন পর্বতারোহী বিমানটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। ২০০০ সালের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমানটি খারাপ আবহাওয়ার কারনে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি বিধস্ত হওয়ার আগে পাইলটের পাঠানো শেষ সংকেত ছিল ‘STENDEC’, যার অর্থ আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।


এমেলিয়া এয়ারহার্ট
আমেরিকার বিমান চলাচলের ইতিহাসে এমেলিয়া মেরী এয়ারহার্ট ছিলেন অগ্রণী বৈমানিক। তিনি প্রথম কোনো নারী বৈমানিক যিনি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেন। তিনি ১৯৩৭ সালে পৃথিবীর জলভাগ ভ্রমণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হন। এসময় তিনি দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট ইলেক্ট্রা নামে বিমানে করে উড়ছিলেন। পরবর্তীতে মিলিয়ন ডলার খরচ করেও তার বিমানের কোনো ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় নি। ১৯৩৯ সালে আমেরিকা সরকার তাকে অফিসিয়ালি মৃত ঘোষণা করেন।



ফ্লাইট ১৯
ইউএস নেভির নিয়মিত প্রশিক্ষণ বিমান ফ্লাইট ১৯। নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ৫ ডিসেম্বর ১৯৪৫ সালে নেভাল এয়ার স্টেশন ফর্ট লডরডেল, ফ্লোরিডা থেকে যাত্রা শুরু করে। ৫টি নেভি অ্যাভেঞ্জার বিমান মিলে ফ্লাইট ১৯, যার নেতৃতে ছিল চার্লস টেইলর। যিনি ছিলেন একজন দক্ষ বিমান প্রশিক্ষক। আবহাওয়া পরিস্কার ছিল, কিন্তু ৯০ মিনিট বিমান আকাশে ওড়ার পর তারা কম্পাসে অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করেন। কম্পাসের অদ্ভুত বিক্ষেপ ও নিচে কোনো ভূমির দেখা না পেয়ে বিভ্রান্তে হন। কন্ট্রোল স্টেশন অনেক চেষ্টা করে তাদের ফর্ট লডরডেলে ফেরত আনার জন্য। কিন্তু কম্পাসের ভুল দিকনির্দেশনার কারণে তারা ভূমির বদলে গভীর সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হয়। এসময় তার ছাত্ররা তাকে পশ্চিমে যেতে অনুরোধ করে কিন্তু তিনি তা না শুনে তাদের অনিশ্চিত দিগন্তের দিকে নিয়ে যান এবং একসময় কন্ট্রোল টাওয়ারে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে যান চিরকালের জন্য। পরবর্তীতে তাদের উদ্ধারের জন্যে আর একটি বিমান পাঠানো হয়েছিল ওই দিন রাতেই। কিন্তু সে বিমানটিও আর ফেরত আসেনি। মজার ব্যাপার হলো ওই দিন টেইলরকে একরকম জোর করেই পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি কেন যেতে চান নি তা এখনো জানা যায় নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।