ঢাকা, বুধবার, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ জুলাই ২০২৫, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

কবুতরের দাম দুই লাখ টাকা!

মুনিফ আম্মার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১১, সেপ্টেম্বর ১, ২০১২
কবুতরের দাম দুই লাখ টাকা!

ঢাকা: টেকনাফ থেকে ছেড়ে দেওয়া হলো কবুতরটিকে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পরদিন সকালে ঢাকায়  ঠিকই এসে পৌঁছে গেছে সেটি।

পথ হারানো আর পথের ক্লান্তি কোনোটিই ছুঁতে পারেনি ছোট্ট এই উড়ালপঙ্খীকে।

৫ থেকে ৭শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েও এ প্রজাতির কবুতর ঠিকই পৌঁছে যায় আপন গন্তব্যে। উড়তে পারদর্শী এই কবুতরের নাম ব্লু- রেসার(সুনীল ধাবক) ।

আছে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা দামের কবুতরও, যার নাম বোখারা। এ কবুতর পালন করার পেছনে মাসিক তেমন কোনো খরচই নেই। কেবল খাবারের খরচটুকুই। সে জন্য প্রতি মাসে একজোড়া বোখারা কবুতরের জন্য ৩শ’ টাকা খরচ হতে পারে। ফলে এ প্রজাতির কবুতর পালন অনেক লাভজনক।

এসব কারণে এক সময়কার শখের কবুতর পালন এখন ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক রূপ পাচ্ছে। কবুতরের ব্যবসা করে অনেক বেকার যুবক যেমন সাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি অনেকের হচ্ছে বাড়তি উপার্জন। আবার বিদেশে রফতানিরও সুযোগ মিলছে ঘরে পালা কবুতরগুলো।

কবুতর পালনকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অনেকেই। তাদের সকলকে এবং কবুতরপ্রেমীদের নিয়ে রাজধানীর মিরপুর-১৪ এর বটতলায় শনিবার বসেছে দিনব্যাপী ‘কবুতরের হাট’। বাংলাদেশ ফেন্সি পিজিয়ন ব্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বটতলা হাটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ কবুতরের হাটে কবুতরপ্রেমীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়।
    
শনিবার সকালে প্রথমবারের মতো বসা ব্যতিক্রমী এ কবুতরের হাটে গিয়ে দেখা মেলে অসংখ্য প্রজাতির কবুতরের। ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এসব কবুতরের সৌন্দর্য কোনোটির চেয়ে কোনোটির কম নয়। দামেও রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। খাঁচায় বন্দী কবুতরগুলোকে হাটে এনে সাজানোও হয়েছে দারুণ করে।

সকাল ১১টায় ‘বটতলা কবুতরের হাট’ উদ্বোধন করতে এসে চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ``কবুতর পোষার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন খুব সহজেই সম্ভব। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের যারা কর্মের অপেক্ষায় আছেন, তাদের জন্য অল্প বিনিয়োগে কবুতর পালন অনেক বড় সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে এজন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা। ``

কবুতর আমদানি ও রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, “বৈধভাবে বিদেশ থেকে কবুতর আমদানি করা কিংবা বিদেশে রফতানি করা নিষেধ। তবে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে রাষ্ট্র যেমন উপকৃত হবে, তেমনি বেকার তরুণরা কবুতর পালনের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতেও সক্ষম হবেন। ”

এক ঝাঁক কবুতর উড়িয়ে এ হাটের উদ্বোধন করেন শাইখ সিরাজ।

বাংলাদেশ ফেন্সি পিজিওন ব্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কোরাইশি মোহাম্মদ তানভীর হাসান বাংলানিউজকে বলেন, “বিশ্বজুড়ে কবুতরের অনেক বড় বাজার রয়েছে। নেদারল্যান্ড ও জার্মানি কবুতর রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কেবল আমাদের দেশ পিছিয়ে আছে। ”

তিনি আরো বলেন, “এ দেশের আবহাওয়া কবুতরের জন্য দারূণ উপযোগী। সরকার সহযোগী হলে শখের কবুতর পালনকারীরা এ মাধ্যমকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে পারবেন। তবে একটি ভালো দিক হচ্ছে, যারা কবুতর পালছেন, তাদের মধ্যে ভেদাভেদের মাত্রা কমে এসেছে। একজন অন্যজনের কাছ থেকে পছন্দের কবুতর আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধও গড়ে উঠছে। এটা খুবই আনন্দের বিষয়। ”

কবুতরের হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে শতাধিক প্রজাতির কবুতর স্থান পেয়েছে। তবে সব কবুতর বিক্রি জন্য আনা হয়নি। মানুষকে কবুতর পালনে উদ্বুদ্ধ করতে সৌখিন কবুতর পালনকারীরা উন্নত জাতের অনেক কবুতর হাটে প্রদর্শন করতে এনেছেন। পাশাপাশি অনেকেই এসেছেন কবুতর বিক্রি করতে। বিক্রেতার সংখ্যাও প্রায় অর্ধশত।

রাজধানীর কাফরুল থেকে আসা কবুতর বিক্রেতা পঙ্কজ বাংলানিউজকে বলেন, “কবুতরতো শখের বশে পালন করি। এখন এর থেকে ব্যবসাও হচ্ছে। আমার ৩০ জোড়া কবুতর থেকে প্রতি মাসে ন্যুনতম ১৫ জোড়া বাচ্চা পাই। বাচ্চা বড় করে সেগুলো বিক্রি করে ভালো আয় হচ্ছে। চাকরির পাশাপাশি বাড়তি এই আয় ভালোই লাগছে। ”

হাটে সবচেয়ে দামি কবুতর হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে তুর্কিস্থান থেকে আনা বোখারা কবুতর। হলুদ বর্ণের এই কবুতরের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান শুভর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, “এই কবুতর তেমন উড়তে পারে না। তবে দেখতে ভীষণ সুন্দর। মাথাভর্তি পশমে পুরো মুখ ঢেকে থাকে। উন্নত প্রজাতির এই কবুতর হাতে দেশে গোনা কয়েকজন পালেন।

বেশ বড় আকারের বোখারা কবুতরের দাম জানতে চাইলে শুভ বাংলানিউজকে বলেন, “এই প্রজাতির কবুতর কিনতে হলে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা গুণতে হবে। তবে কবুতরের পেছনে মাসিক তেমন কোনো খরচ নেই। কেবল খাবারের খরচটুকুই যাবে। সে জন্য প্রতিমাসে একজোড়া বোখারা কবুতরের জন্য ৩শ’ টাকা খরচ হতে পারে। ”

দামি অন্যান্য কবুতরের খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জার্মানি থেকে আনা ব্লু-পটার কবুতরের জোড়া পড়বে ৭০ হাজার টাকা। এক্ই দেশ থেকে আনা স্ট্রেচার কবুতর কিনতে হলেও গুণতে হবে ৪০ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশি ও ভারতীয় বিভিন্ন প্রজাতি ও রঙের কবুতর পাওয়া যাবে ২০ হাজার টাকা থেকে ৫শ’ টাকার মধ্যে। তবে প্রদর্শনীর বাইরে হাটে বিক্রির জন্য আনা সবচেয়ে দামি কবুতর হচ্ছে ম্যাগপাই পটার। যার দাম ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা।

কবুতরের রঙভেদে দামেরও তারতম্য রয়েছে বলে জানা গেছে। ভারত থেকে আনা ময়ূরের মতো পেখম মেলে থাকা কবুতর লক্ষ্যার দাম ধরা হয়েছে জোড়া ৫ হাজার টাকা। অপরদিকে সিল্কি রঙের একই কবুতর কিনতে হলে সঙ্গে বাড়তি গুনতে হবে আরো কয়েক হাজার টাকা। সব কবুতরের ক্ষেত্রেই আকর্ষণীয় রঙের কবুতর কিনতে বাড়তি টাকা গুণতে হবেই।

বটতলা কবুতর হাটের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন খোকন বাংলানিউজকে বলেন, “আসলে ঢাকায় ঠাটারিবাজার ছাড়া আর কোথাও কবুতরের হাট নেই। আমরা এখানে প্রতি শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিয়মিত কবুতরের হাট বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। এর মাধ্যমে কবুতরপ্রেমীদের একটা মিলনমেলা ঘটবে বলে আমরা আশা করছি। ”

ফেন্সি পিজিয়ন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েয়েশনের সভাপতি মাহফুজ আলম বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, “সবকিছুর ওপরে রয়েছে শখ। শখ আছে বলেই আমরা দারূণ সব প্রজাতির কবুতর সংগ্রহ করি। আমার বাড়িতে ৭ শতের বেশি কবুতর রয়েছে। ক্রমেই এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করবো। ”

হাটে ঘুরতে আসা সিয়াম সালেকিন বাংলানিউজকে বলেন, “আমি দুই জোড়া সিরাজি কবুতর পালি। এখানে এসে নতুন অনেক প্রজাতির কবুতরের সঙ্গে পরিচিত হলাম। এমন অনেক কবুতর আছে, যার নাম আগে কখনেই শুনিনি। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। ”

হাটে আরো স্থান পেয়েছে ‘জেকোবিন, ময়ূরাক্ষ্মি, চিয়াচুল্লি, কাচকোরা, সবুজ ডানা, কৃষ্ণ, পারভীন, কোকা, লোটন ও মুক্ষ্মীসহ অনেক প্রজাতির কবুতর।

দিনব্যাপী এ হাট ক্রমেই কবুতরপ্রেমীদের প্রিয় স্থান হবে বলেই আশা করছেন আয়োজকরা। দিন দিন কবুতর মানুষের আরো প্রিয় হয়ে উঠবে, এমনই প্রত্যাশা করেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১২
এমএ/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।