ঢাকা, শনিবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস

বাংলার বিপন্ন জলজ পাখি ‘ডাহুক’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৫৪, জুন ৫, ২০২৫
বাংলার বিপন্ন জলজ পাখি ‘ডাহুক’ চা বাগানের জলাভূমিতে ঘুরছে ডাহুক। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: চা বাগানের পরিত্যক্ত জমিতে জমে আছে পানি। এই জায়গাগুলো নিচু এবং চা আবাদ হয় না বলে বাগান কর্তৃপক্ষ এরূপ জমিগুলোকে চাষাবাদের জন্য চা শ্রমিকদের বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে।

এক বছরের মধ্যে খুব কষ্ট করে দুই ফলস ধান ঘরে তুলতে পারেন তারা। বাকি সময়টুকু এ জলাভূমিগুলো পড়ে থাকে খোলামেলা।  এখানেই দেখা মেলে একাধিক জীববৈচিত্র্যের। আমাদের দেশের পাখি রাজ্যের বিশেষ এক প্রজাতির পাখি ডাহুক।

চা বাগানের এইসব পরিত্যক্ত জমির আশপাশের ঝোপ-ঝাড়েই এদের বসবাস। খুব সকালে এবং সন্ধ্যা মিলিয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে খাবারের সন্ধানে বের হয় তারা। নির্জনতা এদের খুব বেশি পছন্দ বলে মানুষ না থাকলেই এরা ঝোপ থেকে জলজ ভূমিতে খাবার খেতে নামে।  জলাভূমি সংলগ্ন ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল প্রভৃতি উজার হওয়ার কারণে বহু জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। শুধু আবাসস্থল ধ্বংসের কারণেই আমাদের প্রকৃতি থেকে কমে যাচ্ছে ডাহুক। গ্রামবাংলার জলাভূমিতে আগের মতো চোখে পড়ে না তারা। প্রাকৃতিক জলাভূমি এদের প্রধান আশ্রয়স্থল। পুকুর, খাল, বিল, নদীর বাঁক প্রভৃতি জায়গাগুলো তাদের প্রিয়।

ডাহুক জল বা জলাভূমি এলাকায় ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে। হঠাৎ বিপদের আশঙ্কা দেখলেই নিজেকে দ্রুত ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ফেলে। পানিপূর্ণ বিলের শাপলা-পদ্মর ফাঁকে ফাঁকে দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকতে বা লুকাতে পারে সে। কচুরিপানার ওপর দৌড়ঝাঁপ দিতে পারে অনায়াসে। তবে বর্ষা মৌসুমে এদের তুলনামূলকভাবে ডাহুক বেশি দেখা যায়। এদের ইংরেজি নাম White-breasted Waterhen এবং বৈজ্ঞানিক নাম Amaurornis phoenicurus। পুরুষ এবং স্ত্রী পাখি দেখতে একই রকম।

বন-বাদাড়ে বা জলাভূমিতে ঘুরে বেড়ানো গ্রামীণ এই পাখিটিকে নিয়ে লোকসাহিত্যে নানান রচনা রয়েছে। পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন, রূপসীবাংলা’র কবি জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ কবিরা তাদের লেখনিতে ডাহুকের কথা উল্লেখ করেছেন।

এক সময় পোষা পুরুষ ডাহুক দিয়ে বুনো ডাহুক শিকার করা হতো। বেঁধে রাখা পোষা ডাহুকটি খোলা জায়গায় কোনো প্রাকৃতিক ডাহুককে দেখলে যখনি তেড়ে আসে তখনি শিকারির ফাঁদে আটকা পড়ে যায়।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএ), বাংলাদেশের গবেষণা অনুযায়ী ডাহুক ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’(এলসি) প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত।

প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ও লেখক শরীফ খান বাংলানিউজকে বলেন, ডাহুক কমে যাওয়া মূল কারণ তাদের আবাসস্থল অর্থাৎ তারা যেখানে বসবাস করে সেটা ধ্বংস হওয়া। আমাদের চারপাশ থেকে থেকে তো প্রাকৃতিক জলাভূমিসহ ঝোপঝাড় ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তাই এগুলো ওপর আশ্রয় করে থাকা পাখিগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

তিনি আরও বলেন, এককালে গ্রামবাংলায় পোষা ডাহুক যেমন তেমনি বুনো ডাহুকও ছিল। ওরা বাসা বেঁধে ডিম পাড়ার পর বেশি ডাকতো। রাতভর একটানা ডাকতে শোনা যায়। এ ডাক শুনলে মনে হয় ওরা যেন ব্যথা বা কষ্ট থেকে ডাকছে। আসলে তা নয়; এ ডাক মনের আনন্দের বর্হিপ্রকাশ।

এর স্বভাব ও শারীরিক বর্ণনা সম্পর্কে শরীফ খান বলেন, ডাহুক চতুর ও সতর্ক প্রকৃতির পাখি। প্রচণ্ড জোরে ছুটতে পারে বলে তাদের তুখোড় দৌড়বিদ বলা হয়। এদের দৈর্ঘ্য ৩২ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে গলা পর্যন্ত সামনের দিকে সাদা রং এবং পেছনের দিকে কালো রঙের দৃশ্যমান ছাপ রয়েছে। হলদে ঠোঁটের গোড়ায় লাল রঙের সৌন্দর্য রয়েছে।  

জলজ উদ্ভিদের ডগা, ধান, নানা ধরনের শস্যবীজ, জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলাও এদের খাদ্য বলে জানান এ পাখি বিশেষজ্ঞ।

বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।