দেশের প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। যার গান এখনো কোটি শ্রোতার মুখে মুখে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) গুণী এই শিল্পীর জন্মদিন। ১৯৬৯ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন কনকচাঁপা।
বিশেষ এই দিনটি ঘিরে নিজের অভিমত দীর্ঘ এক পোস্টে শেয়ার করেছেন এই গায়িকা। তিনি লেখেন, জীবন ছোট বলেই হয়তো অনেক সুন্দর, মায়াময়। এই পৃথিবীর সব ভালো কিছুই সঙ্গে মায়া জড়িয়ে থাকে প্রচ্ছন্ন ভাবে। কিন্তু সেই মায়াময় পরিবেশ বজায় রাখতে শক্ত হাতে সুনিপুণ ভাবে লক্ষ্য স্থীর করে আলো জ্বালতে হয়। আমি সেই আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে সব অন্ধকার দূর করতে চাই।
যোগ করে কনকচাঁপা লেখেন, কাজটা অনেক কঠিন কারণ সামনে অনেক খানাখন্দভরা অন্ধকার রাস্তা। কিন্তু আমি আল্লাহ ছাড়া কিছুই ভয় পাই না। না জরা, না আঁধার, না মিথ্যাচার, না বদনাম। কারণ আমার আরএসপরচা (জমির খতিয়ানের একটি ধরন বা পর্চা) ঝকঝকে তকতকে পরিস্কার। এই পৃথিবীতে কোথাও আমার নামে লাল কালির গোল্লা চিহ্ন আঁকা নাই আলহামদুলিল্লাহ।
জীবনের এই সময়ের এসে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে এই কণ্ঠশিল্পী লেখেন, জীবনের অনেক পথ পেরিয়ে এসে একটা কথাই বারবার মনে হয়- কত কাজ বাকী রয়ে গেছে। সব কাজ কি শেষ করতে পারবো? এই ৫৫ আর ৫৬-এর ঘরবদলের ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের কাছে অনেক অনেক বেশি দোয়া চাই, যেমন দোয়া আপনারা আপনাদেরই পরিবারের আপন মানুষের জন্য করেন।
গানের জগতের বাইরে একজন রাজনীতিবীদ কনকচাঁপা। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থীও হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। আগামীতেও এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
মেহেনতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কনকচাঁপা লেখেন, আমি কথা দিচ্ছি সাধারণ মেহেনতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে আমি বদলে যাব না। কোন অন্যায় কাজ ও করব না। আপনারা শুধু আমার জন্য খাস দিলে দোয়া করবেন। আমি যেন আমার বাকী জীবন মানুষের কল্যাণে ব্যায় করতে পারি।
তিনি আরও যুক্ত করেন, আমার একটাই চাওয়া আমি মিথ্যাচার মুক্ত বাংলাদেশ চাই। জট বাঁধা উলের গোলায় মিথ্যাচারের আগা পেলেই তাকে কান ধরে টেনে ধীরে ধীরে সুন্দর করে উলের বল তৈরি করার কায়দা আমি জানি আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের সবাইকে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে অনেক অনেক দোয়া।
বলে রাখা যায়, কনকচাঁপার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। ঢাকায় বেড়ে উঠলেও শিল্পীর পৈতৃক নিবাস সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে। গানের ভুবনে তার হাতেখড়ি একেবারে ছোট্ট বেলায়। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।
চলচ্চিত্রের গানে কনকচাঁপা অন্যতম নাম। চার দশকের সমৃদ্ধ সংগীত ক্যারিয়ার চলচ্চিত্রেই তিন হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। এর বাইরে ৩৫টি একক অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন তিনি।
কনকচাঁপার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ছোট্ট একটা জীবন নিয়ে’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, ‘তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়’, ‘আমার নাকেরই ফুল বলে রে তুমি যে আমার’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’, ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘বিরহে পোড়াইলা তুমি আমার এ অন্তর’ ইত্যাদি।
অসামান্য গায়কীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়িকা হিসাবে তিনবার পুরস্কৃত হয়েছেন কনকচাঁপা। তিনি একজন পাঠকপ্রিয় লেখকও। তার লেখা বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘স্থবির যাযাবর’, ‘মুখোমুখি যোদ্ধা’, ‘মেঘের ডানায় চড়ে’ ইত্যাদি।
এনএটি