ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

শাপলা নিয়ে ফের পর্যালোচনা পর সিদ্ধান্ত

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫৯, অক্টোবর ২০, ২০২৫
শাপলা নিয়ে ফের পর্যালোচনা পর সিদ্ধান্ত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থিত প্রতীক শাপলা নিয়ে ফের পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন আইন-বিধি পর্যালোচনা করে শিগগিরই দলটির প্রতীকের বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে সংস্থাটি।

ইসির সচিব আখতার আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ৫০টি প্রতীক থেকে এনসিপিকে প্রতীক বাছাই করে জানাতে বলেছিলাম। ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। শেষদিন দলটির একটি প্রতিনিধিদল এসে ফের শাপলা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে।

আখতার আহমেদ বলেন, দলটির পুনঃআবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি আবার কমিশনের কাছে তোলা হবে। কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে কোন প্রতীক দেওয়া হবে তাদের।

সম্প্রতি ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার উপ-সচিব মো. রফিকুল ইসলামের সই করা চিঠিতে এনিসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে ৫০টি প্রতীকের ভেতর থেকে নিজেদের পছন্দের প্রতীক জানাতে বলা হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “‘জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’ নামীয় দলটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে, যা প্রাথমিক পর্যালোচনায় বিবেচিত হয়েছে। আবেদনপত্রে প্রতীক হিসেবে পছন্দের ক্রমানুযায়ী শাপলা, কলম ও মোবাইল উল্লেখ করা হয়। যা পরবর্তীতে পরিবর্তন (শাপলা, লাল শাপলা বা সাদা শাপলা) করা হয়। উল্লেখ্য যে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) মোতাবেক প্রার্থিত প্রতীক ‘শাপলা’ অন্তর্ভুক্ত নেই। ”

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধান উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, “এই আদেশ বা বিধিমালার অধীন অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে কোন দল কর্তৃক মনোনীত সকল প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত প্রতীক থেকে পছন্দকৃত যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে এবং এইভাবে বরাদ্দকৃত প্রতীক দলটির জন্য সংরক্ষিত থাকবে, যদি না তা পরবর্তীকালে নির্ধারিত প্রতীকসমূহের মধ্য থেকে অন্য কোনো প্রতীক লাভের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে;”

এই অবস্থায়, দলের নিবন্ধনের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯ (১) এ উল্লিখিত প্রতীকের তালিকা হতে বরাদ্দ হয়নি, এমন একটি প্রতীক পছন্দ করে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে অবহিত করার জন্য জন্য বলা হয় চিঠিতে। পরবর্তীতে আরও সময় বাড়িয়ে তা ১৯ অক্টোবর করা হয়।

এক্ষেত্রে যে প্রতীকগুলো থেকে এনসিপিকে তাদের মার্কা পছন্দ করতে বলা হয়, সেগুলো হলো—আলমিরা; খাট, উটপাখি, ঘুড়ি, কাঁপ-পিরিচ, চশমা, দালান, বেগুন, চার্জার লাইট, কম্পিউটার, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ফ্রিজ, তবলা, বক ,মোরগ,,কলম, তরমুজ,বাঁশি, লাউ,কলস, চিংড়ী, থালা, বেঞ্চ,লিচু, দোলনা, প্রজাপতি, বেলুন,ফুটবল, ফুলের টব, মোড়া, বালতি, কলা, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক,ময়ূর, মোবাইল ফোন, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস ও হেলিকপ্টার।

এই চিঠি পাওয়ার পর এনসিপি থেকে দুই দফায় ইসির সঙ্গে বৈঠক করেন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। রোববারও (১৯ অক্টোবর) একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে রাজনৈতিক দল বিধিমালায় প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চায়। তাদের বক্তব্য কোনো নীতিমালা ছাড়াই ইসি নিজের ইচ্ছে মতো মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রতীকের তালিকা করে থাকে। তাই নীতিমালা প্রণয়ন করে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়ার জন্যই দাবি জানায় তারা। একই সঙ্গে শাপলা ছাড়া তারা নিবন্ধন না নেওয়ারও ঘোষণা দেয়। তাদের যুক্তি শাপলা প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনগত বাধা নেই। রাজনৈতিক বাধাও নেই।

শাপলা প্রতীক নিয়ে ইসি সচিব এর আগে গণমাধ্যমকে জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলে যে ১১৫টা প্রতীক আছে সেখানে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা নেই। তাই শাপলা প্রতীক এনসিপি পাবে না।

এরপর দলটির একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে এসে শাপলা প্রতীক না পেলে তা আদায় করে নেওয়ার হুমিক দেয়। তবে সে হুমকিকে উড়িয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক নেতারা  অনেক কথা বলেন। এটা ওনাদের বলার অধিকার আছে। ওনারা বলতে পারেন, আমরা সেরকম জবাব দিতে পারব না। আমরা শুনতে পারব। আমরা শ্রোতা হিসাবে অত্যন্ত উত্তম। আমরা শুনেই যাব এবং আমরা যথারীতি আইন মোতাবেক কাজ করেই যাব। আমরা মোটেও হুমকি মনে করি না। কারণ ওনারা দেশদ্রোহী নন, দেশপ্রেমিক। ওনাদের এগুলোকে আমি হুমকি মনে করি না। ওনারাও দেশের প্রেমিক, ওনারাও দেশের মঙ্গল চান, দেশের ভালো চান। যে ধরনের কর্মকাণ্ড করলে দেশের মঙ্গল হবে, সেটা ওনারাও বোঝেন। আমি এটাকে দেশের জন্য হুমকি মনে করি না, আমাদের জন্য কোনো হুমকি মনে করি না।

ইসিতে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৬টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সস্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ মোট ৫৬টি প্রতীক ৫৬টি দলের জন্য নিবন্ধিত রয়েছে। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত দলের বাইরের প্রতীকগুলো নতুন দল ও সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, এনসিপিসহ দু’টি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ১৩টি দলের আবেদন পর্যালোচনায় রয়েছে।

ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।