ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অক্টোবরে বসবে সংস্থাটি।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আগে সুশীল সমাজ, নারী প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। বড় কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলে যা আগামী সপ্তাহ নাগাদ শুরু হতে পারে।
জানা গেছে, সংলাপের সময়সূচি প্রস্তুত করে রেখেছে ইসি সচিবালয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা নথিতে অনুমোদন করলেই অংশীজনদের চিঠি দিয়ে ও ফোনে জানানো হবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় এক মাস ধরে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নারী নেত্রী, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও জুলাই যোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে নতুন দলের নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। তাদের নিয়েই কমিশন সংলাপের আয়োজন করতে চায়। এজন্য দলগুলোর সঙ্গে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর বসা হবে। তবে এবার দলগুলোকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে এবং বড় দলগুলোকে আলাদা আলাদা করে সংলাপ হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সবগুলো দলকেই আমরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করতে পারি না। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বড় দলগুলোকে আলাদা এবং অন্যান্য দলগুলোকে গ্রুপে ভাগ করে নিয়ে বসতে পারি।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, সংলাপ চলতি মাসের শেষের দিকে শুরু হতে পারে। আমাদের সবকিছু প্রস্তুত করা আছে। এখন কমিশন অনুমোদন দিলেই হবে। দলগুলোর ক্ষেত্রে কয়েকটি গ্রুপ হতে পারে। কারণ একটা একটা করে বসতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। আমরা দেখবো যেটি সবচেয়ে ভালো হবে, সেটির দিকে যেতে।
জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ২২টি নতুন দলের নিবন্ধন কার্যক্রমও প্রায় শেষের পথে। মাঠ পর্যায় থেকে দলগুলোর বিষয়ে আসা তদন্ত প্রতিবেদনও পর্যালোচনা প্রায় শেষ। চলতি সপ্তাহেই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এমন দলগুলোর নাম উল্লেখ করে সবার কাছে দাবি-আপত্তি চাওয়া হবে। এতে কোনো দলের বিরুদ্ধে আপত্তি না থাকলে সেই দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে। আর আপত্তি থাকলে তার শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ জানান, রোডম্যাপ অনুযায়ী সংলাপ ও দল নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। রোডম্যাপে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দল নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সংলাপ আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
এক-এগার সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশে নির্বাচনী সংলাপ প্রথা চালু করেছে। সংলাপে দলগুলো ও অংশীজনদের কাছ থেকে আইনি সংস্কার, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকে ইসি। পরে কমিশনের জন্য আমলযোগ্য পরামর্শগুলো আইনি কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও এবার আইনি বিভিন্ন ধরনের সংস্কার ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ফেলেছে ইসি। তবে সংসদ নির্বাচনের মূল আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন এখনো বাকি রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটের প্রস্তুতির অনেকটাই সম্পন্ন করে ফেলেছে। এর মধ্যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রায় শেষের পথে, চলছে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়ায়ও, নির্বাচনী কেনাকাটাও ৭০ শতাংশের মতো শেষ। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থাও করছে ইসি। এজন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। ডাক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যালট পেপার ও বিভিন্ন ধরনের মুদ্রণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য বিজি প্রেসকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। দল নিবন্ধন ও সংলাপ শেষ হলে বড় বড় সব কাজই গোছানো হয়ে যাবে।
সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন ইতোমধ্যে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করে তার কমিশন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ করতে চায়। আর সেই লক্ষ্যে ‘ফুল গিয়ারে’ চলছে তাদের প্রস্তুতি।
ইইউডি/আরবি