ঢাকা, রবিবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৭ মহররম ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

শাপলা প্রতীক না দিলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার হুঁশিয়ারি এনসিপির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৬, জুলাই ১৩, ২০২৫
শাপলা প্রতীক না দিলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার হুঁশিয়ারি এনসিপির বক্তব্য দিচ্ছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী।

শাপলা প্রতীক না দেওয়া হলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

রোববার (১৩ জুলাই) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী এই হুঁশিয়ারি দেন।

তিনি বলেন, আমাদের শাপলার কোনো বিকল্প অপশন নেই। কারণ লিগ্যাল ওয়েতে আমরা দেখেছি আইনগতভাবে প্রতীকটি পেতে আমাদের কোনো বাধা নেই। যদি বাধা দেওয়া হয় সেটা আমরা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ইসি পুনর্গঠন করতে হবে স্ট্রেট ফরওয়ার্ড। ইসি যেভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল সে আইনটারও পরিবর্তন করতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের নতুন যে সিস্টেমগুলো আছে, সেটা অনুযায়ী ইসিতে যারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী নিজের ভালো কাজের পরিচয় দিয়েছেন তাদের রাখা যেতে পারে। ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। কেননা অনেকে তাদের ব্যক্তি জায়গা থেকে দলীয় মুখপত্র হিসেবে কাজ করছেন।  

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলে প্রতীক সংশোধনের লক্ষ্যে যে প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি রয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত থাকা অবস্থায়ও তাদের নৌকা প্রতীক বাদ দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই বিষয়টি কমিশনের নজরে এনেছি যে আইনগতভাবে আপনারা নৌকাকে এই তালিকার ভেতরে রাখতে পারেন না, যতক্ষণ না এটি সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর যে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আছে সেটি তুলে নেয় অথবা আদালতের মাধ্যমে অন্য কোনো নির্দেশনা আছে। আমরা এই বিষয়টি কমিশনের নজরে এনেছি। কমিশন এটি বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন এবং তারা এ ব্যাপারে ওখান থেকে এটা দেওয়ার জন্য যে উদ্যোগটি নেওয়ার সেটি তারা নেবেন। তারা এটি আলোচনার আশ্বাস আমাদের দিয়েছেন।

জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, বিগত ২২ শে জুন আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি নিবন্ধনের যে যাবতীয় শর্তাবলী আছে সেসব শর্তাবলী পূরণ করে ৪৩ হাজার ৩১৬ পৃষ্ঠার দরখাস্ত দাখিল করেছিলাম। সেই দরখাস্তটি অগ্রগতি কোন পর্যায়ে আছে বা আমাদের কাছ থেকে অন্য কোনো ডকুমেন্ট বা অন্য কোনো কিছু জানার আছে কিনা সেগুলো আমরা কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছি। এ ছাড়া আমরা প্রবাসী যে ভোটার তারা কীভাবে ভোট ভোট দেবেন, যে তিনটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটির অগ্রগতি কী সেটির ব্যাপারে আমরা জানতে চেয়েছি এবং সেখানেও নির্বাচন কমিশন আমাদের এ বিষয়গুলোতে আপডেট দিয়েছেন।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা কিন্তু এখনো নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নেই এবং সর্বশেষ যে তালিকা তারা পাঠিয়েছেন আপনারা দেখবেন সেখানে দাঁড়িপাল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তারা এটি রেখেছেন। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন যখন বাতিল হয়ে গিয়েছিল তখন কিন্তু প্রতীকের তালিকা থেকেও দাঁড়িপাল্লাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে আপনি যদি আওয়ামী লীগের বিষয়টি দেখেন যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বর্তমানে স্থগিত অবস্থায় আছে। নিবন্ধন স্থগিত থাকা দলের প্রতীক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকার সুযোগ নেই। এটি আমরা বলেছি যে যেহেতু আওয়ামী লীগের নির্বাচনী তাদের যে নিবন্ধন সেটি স্থগিত আছে। অতএব তাদের প্রতীকটিও স্থগিত থাকতে হবে।  

শাপলা প্রতীকের বিষয়ে জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, আপনারা যদি সংবিধানের চারের তিন অনুচ্ছেদ এবং ১৯৭২ সালের একটি অর্ডার আছে। এই জাতীয় প্রতীক নিয়ে একটি রুলস আছে। এগুলোর একটি কম্বাইন রিডিং আপনারা দেখেন, সেখানে দেখবেন যে চারটি আলাদা স্বতন্ত্র উপাদান নিয়ে জাতীয় প্রতীকটি গঠিত। তার ভেতরে ধানের শীষ আছে, তার ভেতরে তারকা আছে, তার ভেতরে পাটপাতা আছে এবং শাপলা আছে। ধানের শীষ আপনারা জানেন ইতোমধ্যে জাতীয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতীক, তারকা একটা দলের প্রতীক এবং পাটপাতা, সোনালী আঁশ আরেকটা দলের প্রতীক আছে। এ ছাড়া জাতীয় ফুল হিসেবেও যদি আপনি এটাকে ট্রিট করেন আর জাতীয় ফল কাঁঠাল আরও একটি অন্য একটি নিবন্ধিত দলের প্রতীক হিসেবে রয়েছে। তো আমাদের এখানে মিসকনসেপশনটি বারবার হচ্ছে যে জাতীয় প্রতীককে শাপলা হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় প্রতীক আসলে শাপলা নয়। জাতীয় প্রতীক হচ্ছে চারটি আলাদা আলাদা উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতীক।

তিনি আরও বলেন, তফসিলের যে তালিকা আছে- সেই তালিকাটি আসলে যেকোনো সময় সংশোধন করা যায়। এটি একটি বিধিমালা। বিধিমালা সংশোধন করতে পার্লামেন্টেরও দরকার হয় না, অর্ডিন্যান্স জারিরও দরকার হয় না। এটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান করতে পারে, কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং করতে হয়। আমরা যেহেতু নৌকার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছি এবং বলেছি যে নৌকাকেও এই লিস্টের ভেতরে রাখা যাবে না। তালিকার ভেতরে রাখা যাবে না। এটি করতে গেলেও কমিশনকে আসলে নতুন করে ওই তালিকায় এই সংযোজন বা বিয়োজনের একটা প্রসঙ্গ থাকবে। সেই জায়গা থেকে আমরা নতুন একটা দরখাস্ত দিয়েছি। বলেছি যে প্রতীকের তালিকা থেকে শাপলাকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে যে ব্যাখ্যাটি গণমাধ্যমে নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যাটি আসলে আইনগতভাবে একটি ভুল ব্যাখ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে ব্যাখ্যাগুলো জানিয়েছি এবং স্পষ্ট করেছি যে আইনগত কোনো বাধা শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে রাখার ক্ষেত্রে নেই। তাই শাপলাকে আগে এই প্রতীক হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি যদি নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারে এবং নিবন্ধন দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন যেন আমাদের এটি বরাদ্দ দেওয়া হয়।  

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনের যে একটা প্রেসক্রাইব ফর্ম ছিল সেখানে দফা ছয়ে উল্লেখ করা ছিল যে আপনারা দল হিসেবে কোন প্রতীক আপনাদের বরাবর সংরক্ষণের জন্য করবেন, বলা আছে। সেখানে আমরা শাপলাকে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। আমরা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় আরও দুটি অপশন দিয়েছিলাম। কিন্তু শুরু থেকেই আমাদের প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্যই ছিল শাপলাকে প্রতকী হিসেবে আমাদের পক্ষে সংরক্ষিত যেন রাখা হয়।

অন্য একটি দলও শাপলা চেয়েছে বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের আগে অন্য একটি দল চেয়েছিল বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যাখ্যাটি হলো যেহেতু ওই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তারা যখন নিবন্ধন পায় তখন তাদের কেটলি মার্কা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তারা যদি নতুন করে আবার এই প্রতীকটি চেঞ্জ করতে চায় তাহলে তাদের কিছু ফরমালিটিস আছে। তাদের অনেক বেশি বার্ডেন আছে। যেটা আমরা নতুন দল হিসেবে নেই। আমরা চেয়েছি যে এটা তালিকাভুক্ত করে আমাদের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য।

ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।