ঢাকা, সোমবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিক্ষা

বেতনবঞ্চিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই আইডিয়াল অধ্যক্ষের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৬, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
বেতনবঞ্চিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই আইডিয়াল অধ্যক্ষের অভিযোগ

ঢাকা: ১৩ মাস ধরে বেতনবঞ্চিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই এবার ‌‌মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছাড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম।

তার দাবি, আওয়ামীপন্থী কিছু কুচক্রী শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য সন্ত্রাস ছড়িয়ে প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আওয়ামীপন্থী কুচক্রীমহলটি গত ১৭ বছর তিলে তিলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি, বর্তমানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্ট ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে '‌যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সার্বিক অবস্থা নিয়ে' আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, আমার ও যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে ১৩ মাস ধরে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দেওয়া, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, আওয়ামী লীগ আমলে তোষামদ করে সুবিধা ভোগের অভিযোগ রয়েছে, যা বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্তাধীন। এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য আনতে গিয়ে সাংবাদিকরাও হেনস্থার শিকার হয়েছেন। গত ১৩ জুলাই এসব বিষয়ে ‘১৩ মাস বেতনবঞ্চিত শিক্ষকরা, দুর্নীতির অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে বাংলানিউজে একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়।

১৩ মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন না দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন (২০১১-১২) গভর্নিং বডি ও কিছু শিক্ষকের অশিক্ষাসুলভ আচরণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ১৪৩ জন। বর্তমানে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে ১৬৯ জন। এর মধ্যে শিক্ষক ১৪২ জন এবং কর্মচারী ২৭ জন। শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে এমপিওভুক্ত আছে যথাক্রমে ৩৫ জন ও ৫ জন। বাকিদের বেতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় থেকে বহন করতে হয়।

তিনি আরো দাবি করেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে একাডেমিক ফি বাবদ আদায় করা হয় ১৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অথচ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ব্যয় হয় ২৬ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৭ টাকা। এর সঙ্গে বিদ্যুৎ, ওয়াসাসহ অনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র ক্রয় বাবদ ব্যয় হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে খরচ হয় ২৯ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৭ টাকা। শিক্ষার্থীদের ফি বাবাদ প্রতি মাসে ঘটতি থাকে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৭ টাকা। দুই ঈদের বোনাসসহ বছরে এই ঘাটতি গিয়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৫ হাজার ৭২৪ টাকা। বছরে এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতির টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া হওয়ার মূল কারণ বলে দাবি করেন তিনি।

এই ঘটতির জন্য বেতনবঞ্চিত শিক্ষকদেরই দায়ী করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০২২ সালে ডিআইএ রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের অনুপাতে প্রায় দ্বিগুন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। প্যাটার্ন ও বিধি বহির্ভূতভাবে ও খেয়ালখুশিমত গত ১৭ বছর যাবৎ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটে পড়েছে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া প্রায় ৮ কোটি টাকা আত্মাসাতের অভিযোগ রয়েছে মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ কোটি ৯০ লাখ ১৭ হাজার ২৬০ টাকা পেয়েছেন তিনি। যে টাকা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের ৯ মাসের বেকেয়া ও দুইটি উৎসব ভাতা দেওয়া হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত দুইটি ভবন সংস্কার ও মেরমত করা হয়েছে, একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ৫ বছরের এরিয়াসহ বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে, একজন সাবেক অধ্যক্ষ ও একজন সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের রেখে যাওয়া ২২ লাখ টাকা বকেয়া প্রিন্টিং বিল দেওয়া হয়েছে এবং একটি অত্যাধুনিক ডিজেল জেনারেটর কেনা হয়েছে।

বেতনবঞ্চিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সহকরী শিক্ষক (প্রাথমিক শাখা) আরিফুন্নাহার শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সময় বেতনের কথা বলে নেওয়া স্বাক্ষরের শিট যুক্ত করে কোনো প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়া অসত্য অভিযোগ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রদান করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্ট করছেন। এমনকি এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলমারী ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, নগদ টাকা ও ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন মরিয়ম বেগম।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের তারা নিয়োগ বাতিল হয়ে গেলে তিনি হাইকোর্টে একাধিক রিট করেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। বরং বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্তে পাঠালে প্রত্যেকটি তদন্ত প্রতিবেদন তার বিপক্ষে চলে যায়। এখন তার পক্ষের কিছু শিক্ষক অভিভাবকদের দিয়ে বিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।

এসসি/এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।