ডাকসু নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছেন ভোটাররা। যোগ্যতা, ইশতেহার, ক্যাম্পাসে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, ব্যক্তিগত পরিচিত, অঞ্চল, হল ও বিভাগ বিবেচনায় তালিকা তৈরি পদক্রম নির্ধারণ করছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবার ২৮ পদের বিপরীতে ৪৭১ জন প্রার্থী লড়ছেন। অধিকাংশ হলে ১৩ পদের বিপরীতে ৬০ জনের ওপর প্রার্থী রয়েছেন। ফলে কেন্দ্র ও হল মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা কোন ৪১ জন প্রার্থীকে ভোট দেবেন, তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই একাধিক ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক গ্রুপ এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন পদে ‘যোগ্য’ প্রার্থী খুঁজছেন। একাধিক ভোটার পূর্ণাঙ্গ প্যানেলেই ব্যালট ও প্রার্থীর নামের তালিকা জানতে চেয়েছেন। এসব তালিকা থেকে তারা পছন্দের প্রার্থীর একটি ক্রম তৈরি করবেন।
অন্যদের কেউ কেউ ভিপি, জিএস, এজিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর তালিকা নিশ্চিত করতে পারলেও সম্পাদকীয় পদগুলোতে কাকে ভোট দেবেন, তা ঠিক করতে পারেননি।
শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ প্রার্থীর বিষয়ে জানতে সহপাঠী, অগ্রজ ও অনুজদের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করছেন। কেউ কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করছেন, কাকে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে কাকে ভোট দেবেন, তা চূড়ান্ত করলেও সম্পাদকীয় পদগুলো সম্পর্কে নিজের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
পোস্টে ২৮ জন নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর নাম তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পাদক প্রার্থী মো. সাকিবসহ ২৮ জন প্রার্থীর নাম এসেছে।
নাজমুল বাংলানিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত আচার-আচরণ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে তালিকা তৈরি করছেন।
তিনি বলেন, এছাড়াও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের প্রতি অনীহা রয়েছে। তবে যারা শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করেছেন, রাজনৈতিক হলেও তাদেরই ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন নাজমুল।
কেবল নাজমুল নন, একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্তে তালিকা তৈরি করতে তারা বেশ হিমশিম খাচ্ছেন। কোন পদে কাকে ভোট দেবেন, তা নির্ধারণ করতে না পারলে একাধিক পদ খালি রেখে আসার কথাও জানিয়েছেন ভোটাররা।
তারা বলছেন, পূর্বের কাজ, ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ের ভূমিকা এবং সামনেও শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি রাখবেন কী না, তা তারা বিবেচনায় রাখছেন।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থী তাহমীদুর রহমান বলেন, আমার উপকার করুন বা না করুন, আমার ক্ষতি করবেন না, এমন কাউকেই ভিপি পদে নির্বাচিত করব। এছাড়া প্রার্থীদের যোগ্যতা বিবেচনায় রেখেছি।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে যারা কাজ করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল এবং কারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকায় ছিল, তাদের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অবশ্য বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত ইসলামের তালিকা তৈরির কাজ শেষ। আগামীকাল কেবল এই তালিকা অনুযায়ী ভোট দেওয়া বাকি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রস্তুতি শেষ করেছি, কাকে ভোট দেব তাও বাছাই করা শেষ। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক বিবেচনায় না রেখে যোগ্য প্রার্থীকে বাছাইয়ের চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, বিশেষ করে পূর্বে কাজ, প্রচারণাকালীন সময়ে তাদের আচরণ, তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়েছি।
কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী উম্মে সীমা বলেন, যোগ্যতা, ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে যারা ভূমিকা রেখেছে, তারা বিবেচনায় আছে। সামনে কেমন কাজ করবেন, তা বিবেচনায় নিচ্ছি।
কারও রেফারেন্স বিবেচনায় নিচ্ছেন কী না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে আমার পরিচিত কেউ নেই। সেখানে রেফারেন্স নিচ্ছি। তবে যাচাই করে। নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছি তার কাজ কী বা তিনি আসলেই যোগ্য কী না।
সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি ল, অংশগ্রহণ ও প্রত্যাশা নিয়ে একটি গবেষণা করে ঢাবি গবেষণা সংসদ। গবেষণায় ৬৮২ জনের মতামত নেওয়া হয়েছে।
এতে দেখা যায়, ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা ও ব্যক্তিত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। দ্বিতীয় প্রাধান্য নেতৃত্বের দক্ষতা। একাডেমিক সাফল্য, ব্যক্তিগত পরিচিতি, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে অবদানকেও খুব একটা প্রাধান্য দিচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে নির্বাচন শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মতামতের চূড়ান্ত প্রতিফলন হবে।
এফএইচ/এসআরএস