ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের একদিন আগে ক্যাম্পাসজুড়ে ভোটের আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচনের প্রচারণার কোলাহল থেমে গেলেও শিক্ষার্থীদের আড্ডা, হল-করিডোরে এখন শুধু ভোট এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল নিয়েই আলোচনা।
গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার পর থেকে সব ধরনের প্রচারণা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিনের সরব ক্যাম্পাসে এখন কিছুটা ভিন্ন পরিবেশ। ভোটকেন্দ্রিক প্রস্তুতি সর্বত্র।
জাতীয় রাজনীতিতে এই নির্বাচনকে আগামীর সংসদ নির্বাচনের একটি রিহার্সাল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও বেশি আগ্রহ তৈরি করেছে। বিভিন্ন প্রার্থীর জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. জসীম উদ্দিন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের মনে এখনো প্রশ্ন, ভোটের দিন পরিস্থিতি কতটা শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং শেষ মুহূর্তে কোন প্রার্থীরা এগিয়ে যাবে।
ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৬২ জন প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে ভিপি পদে ৪৮, জিএস পদে ১৯ এবং এজিএস পদে ২৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন, স্বতন্ত্র প্যানেল এবং জোটের প্রার্থীরা আলোচনায় রয়েছেন।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি পদে আবিদুল ইসলাম খান, জিএস পদে শেখ তানভীর বারী হামিম এবং এজিএস পদে তানভীর আল হাদী মায়েদ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
অন্যদিকে, ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে ভিপি পদে আবু সাদিক কায়েম, জিএস পদে এসএম ফরহাদ এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান আলোচনায় রয়েছেন। এই দুটি প্যানেলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
রাজনৈতিক প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেনও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।
এছাড়া গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে আবদুল কাদের এবং জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার লড়ছেন। জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মাহিন সরকার শেষ মুহূর্তে আবু বাকের মজুমদারকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় এই প্যানেলটি আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে উমামা ফাতেমা, ছাত্রঅধিকার পরিষদ থেকে ভিপি পদে বিন ইয়ামিন মোল্লা এবং বামপন্থী শিক্ষার্থীদের প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ থেকে ভিপি পদে শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি এবং জিএস পদে মেঘমল্লার বসু লড়ছেন।
সব মিলিয়ে, প্রচারণার কোলাহল থেমে গেলেও ডাকসু নির্বাচনের আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কোণেই এখন শুধু ভোটের দিনের জন্য অপেক্ষা। শিক্ষার্থীদের মনে মিশ্র অনুভূতি: উত্তেজনা, প্রত্যাশা এবং সামান্য শঙ্কা। আগামীকালকের নির্বাচন ডাকসুর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, এমনটাই আশা করছে সবাই।
ইএসএস/এইচএ/