ঢাকা, বুধবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিক্ষা

ডাকসু: নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটার উপস্থিতি কমাতে ছক আঁকার অভিযোগ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩৬, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
ডাকসু: নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটার উপস্থিতি কমাতে ছক আঁকার অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেল সদস্যরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমাতে নির্বাচন কমিশন ছক আঁকছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আবু বাকের মজুমদার। ভোটকেন্দ্র পুনর্বিন্যাস করে শিক্ষার্থীদের ভোটদান প্রক্রিয়া সহজ করার দাবিও জানিয়েছে তার প্যানেল।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বাকের।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন ভোট দিতে না পারে, সেজন্য ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন কমিশন ছক এঁকেছে। কার্জন হলের পরীক্ষাকেন্দ্রে তিনটি হল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে অনেক ভবন ফাঁকা, চাইলেই অন্য ভবনে ভোট নেওয়া যেত। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, তারা শোনেননি।

আবু বাকের মজুমদার বলেন, কমিশন বলেছে ভোট গণনার মেশিন কম; সেকারণে তারা কেন্দ্র কম রেখেছে। এই সিদ্ধান্তের পর আমরা সন্দেহ করেছিলাম। তিনি এ সময় কয়েকটি হলের জন্য নির্বাচিত ও ‘সহজতর’ কেন্দ্র তুলে ধরেন। বাকের বলেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে। অথচ এটিকে খুব সহজেই সমাজকল্যাণ ইউনস্টিটিউটে নিলে শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে সুবিধা হয়।

হলপাড়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ বা কলাভবন সহজ হয়। কিন্তু তাদের কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে উদয়ন স্কুল। অন্যদিকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং জগন্নাথ হল উদয়ন স্কুলের কাছে হলেও তাদেরকে দেওয়া হয়েছে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে। চাইলেই শামসুন নাহার হলের কেন্দ্র আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দেওয়া যেত। কিন্তু তাদের কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল।

এরপর তিনি সবগুলো হলের জন্য সহজতর কেন্দ্র সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, কার্জন হল এলাকায় শহীদুল্লাহ হল এবং অমর একুশে হলকে নতুন ২২ তলা ভবনে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ফজলুল হক মুসলিম হলকে কার্জন হলের পরীক্ষাকেন্দ্রে রাখা যেতে পারে। সুফিয়া কামাল হলকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা স্বাগত জানাই। বিজয় একাত্তর হল এবং শেখ মুজিবুর রহমান হলের কেন্দ্রকে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে দেওয়া যেতে পারে। কলাভবন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল এবং কবি জসীম উদ্দীন হলের কেন্দ্র দেওয়া যেতে পারে। সিনেট ভবন এলাকায় সূর্যসেন এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল রাখা হয়েছে, যেটি ঠিক আছে।

বাকের আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং স্যার এ এফ রহমান হলকে দেওয়া যেতে পারে। উদয়ন স্কুলে জগন্নাথ হল এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলকে দেওয়া যেতে পারে এবং শামসুন নাহার হলকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এবং বাংলাদেশ কুয়েত-কুয়েত মৈত্রী হলের কেন্দ্র সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে দেওয়া যেতে পারে। আমরা যেভাবে সুপারিশ করেছি, তাতে কেন্দ্র হয় মাত্র নয়টা। একটু পুনর্বিন্যাস করলেই এটি করা সম্ভব।

এর আগে বক্তব্য দেন এই প্যানেলের এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার ফলে ভোটকেন্দ্র শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। আশরেফা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভোটদানের পরদিন পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে। ফলে অনেকেই বাড়িতে চলে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভোট পুরোপুরি কাস্ট হবে কিনা, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ কী, তা নিয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। বন্ধের কারণে ভোটের দিন ভোটার আসবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

শেষে এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ডাকসু নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বৃহৎ একটি রাজনৈতিক শক্তি আবার ডাকসুকে বানচাল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। প্রশাসন থেকে মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার জন্য বসা হয়। কিন্তু আমাদের কোনো পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান যে মেকানিজম করা হয়েছে, তাতে ৩৯ হাজার শিক্ষার্থীর ভোট দেওয়া সম্ভব না। শিক্ষার্থীরা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এটি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং চারদিন বন্ধ রাখার বিষয়ে একাধিক সংগঠন আপত্তি জানিয়েছে। ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম এবং ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়েছিলেন। তবে গত ২৬ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে ভোটকেন্দ্র পুনর্বিন্যাস বা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মারুফুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্র রুম ও বুথ সরেজমিনে  দেখেছি। আমাদের হিসেব অনুযায়ী ৮টি কেন্দ্রে স্মুথভাবে ভোট পরিচালনা হবে। ফলে আপাতত পরিকল্পনা থেকে সরে যাওয়ার শক্ত কোনো কারণ দেখছি না।

এফএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।