ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শিক্ষার্থীরা হাতে পেলেন একটি ‘লিগ্যাল নোটিশ’।
অভিনব এই ‘লিগ্যাল নোটিশটি’ পাঠিয়েছেন মেহেদী হাসান মুন্না। ডাকসু নির্বাচনে তিনি ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে 'আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক' পদে লড়ছেন।
মুন্নার এই অভিনব প্রচারণা অনেকের নজর কেড়েছে। নোটিশে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।
মজার এই ‘লিগ্যাল নোটিশের’ শুরুতে মুন্না লেখেন, ‘প্রাপক: ঢাবির সর্বাপেক্ষা সুন্দরী রমণী এবং সুদর্শন পুরুষ। ’
এতে তিনি আরও লেখেন, ‘আপনি লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতাকে মানবাধিকারের পক্ষে অনুরোধ করে এই মর্মে অবহিত করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানবাধিকার পড়ালেও কাঠামোগত ও গঠনতান্ত্রিক সংঘাত দ্বারা শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করে। মু. মেহেদী হাসান মুন্না পূর্ব এবং বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও অধিকার আদায়ের লড়াই করতে চায়। ’
এরপর মুন্না তার ১১টি প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। শেষে তিনি তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
কেবল মুন্নাই নন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিতে, তাদের মন জয় করতে নিয়েছেন নানা কৌশল।
২৬ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রার্থীদের কেউ সৃষ্টিশীল পোস্টারে নিজের প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন, কেউ হ্যান্ডবিল হিসেবে তৈরি করেছেন মুদ্রিত নোট। কেউ কেউ ভোট চেয়েছেন গান ও কবিতা আবৃত্তি করে।
টাকার আদলে লিফলেট ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছেন মো. আরাফাত হোসেন। মুদ্রিত নোটের একপাশে লেখা ‘ডাকসু ভোট ব্যাংক’। অন্যপাশে ‘চাহিবামাত্র ইহার প্রার্থীকে একশত সত্তর নম্বর ব্যালটে ভোট দিয়ে বাধিত করিবেন। ’
আরাফাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাদা-কালো এ নোটের এক পিঠে দেওয়া হয়েছে একটি কিউআর কোড, যেটি স্ক্যান করলেই পাওয়া যাচ্ছে প্রার্থীর ইশতেহার।
এ বছর ভিন্ন একাধিক প্রচারণা চালিয়েছেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী ইব্রাহীম আদল। তিনি আসিফ নজরুলের ‘আমি যদি কোনোদিন কোনো মন্ত্রণালয় বা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেতাম, জীবন দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করার জন্য কাজ করতাম’—কথা সংবলিত ভিডিওটি নকল করেছেন। এই ভিডিও প্রায় ৩ লাখ ৮৭ হাজারবার দেখা হয়েছে।
এ ছাড়া ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যের আরেকটি ভিডিও তিনি নকল করেছেন। সেটি ৪ লাখ ৯৬ হাজারবার দেখা হয়েছে।
জারি গান গেয়ে নিজের ইশতেহার তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়ছেন। ডাকসু নিয়ে ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালাতেই গান গেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন জহিন ফেরদৌস জামি। তিনি প্রথম বিভাগের ক্রিকেট খেলেছেন।
জামি তার প্রচারণায় যুক্ত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলোয়াড়দের। তার পক্ষে প্রচারণা করেছেন জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় মুরসালিন, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তৌহিদ হৃদয়, তানজীম হাসান সাকিব, মাহমুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসাইন ইমন এবং বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাপ্টেন প্রান্তিক নওরোজ নাবিল।
এ ছাড়াও একাধিক প্রার্থী ডলারের নোট তৈরি, আবৃত্তি, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভোটের প্রচারণায় নেমেছেন।
সাড়াও মিলছে
এসব প্রচারণায় ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রার্থীরা। তারা বলছেন, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে প্রচারণায় নতুনত্ব আনায় ভোটাররা তাদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
মেহেদী হাসান মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, গতানুগতিক ধারার লিফলেট ভোটাররা পড়ছে না। আমি নির্বাচিত হলে কী করব, তা যদি মানুষ না জানে, তাহলে এটা তো ঝামেলার। সে কারণে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। তা ছাড়া যেহেতু আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে নির্বাচন করছি, তাই ‘লিগ্যাল নোটিশের’ ব্যাপারটিও আমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সবাই বিষয়টি ইউনিক হিসেবে দেখছেন।
আরেক প্রার্থী ইব্রাহীম আদল মনে করছেন, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে তার প্রচারণা কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইন প্রচারণার কারণে মানুষ চিনতে পারছে। কথাবার্তা বলার সুযোগ হচ্ছে।
এ ছাড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর উপায় খুব বেশি নেই। ফলে এসব প্রচারণায় তাদের কাছে যাওয়া সহজ হচ্ছে বলেও জানান ইব্রাহীম আদল।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
এফএইচ/এমইউএম