ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৯ মে ২০২৫, ০১ জিলহজ ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবিতে বামপন্থী-শাহবাগবিরোধী ঐক্যের সংঘর্ষ, আহত ৫

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:৩১, মে ২৮, ২০২৫
রাবিতে বামপন্থী-শাহবাগবিরোধী ঐক্যের সংঘর্ষ, আহত ৫ রাবিতে সংঘর্ষ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সঙ্গে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) রাত সোয়া ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্যারিস রোডে দুই দফায় এ সংঘর্ষ ঘটে।

এতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের চার নেতা এবং একজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ নামে প্ল্যাটফর্মটি এর আগে দেখা যায়নি। তবে তাদের মিছিলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়।

আহতরা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রগণমঞ্চের সভাপতি নাসিম সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশরাফ, ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কাইসার আহমেদ ও দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ সৈকত, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রতিনিধি নোমান ইমতিয়াজ।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিলের ডাক দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ মিছিল হওয়ার কথা ছিল।

তবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী মিছিল শুরু না হওয়ায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পরিবহন মার্কেটের আমতলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

অন্যদিকে, রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল জ্বালিয়ে মিছিল শুরু করেন।

একপর্যায়ে সমাবেশস্থল থেকে কিছু শিক্ষার্থী বাম নেতাদের দিকে তেড়ে যান। তখন উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং চেয়ার ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় নোমান ইমতিয়াজ আহত হন।

পরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল নিয়ে এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের দিকে অগ্রসর হলে তাদের পিছু নেন কয়েকজন। এ সময় শিবিরের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নওসাজ্জামানসহ কয়েকজন তাদের বাধা দেন।

পরে মশাল মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে পৌঁছালে শিবিরের নেতাকর্মীরা ফের মিছিলে বাধা দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। এ সময় বাম নেতা নাসিম সরকারকে ধাক্কা দিলে তিনি সড়কে পড়ে যান। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

পরে বাম নেতারা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। তখনও শিবিরের নেতাকর্মীরা এসে তাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘আমাদের মশাল মিছিলে প্রায় সবাই আহত হয়েছেন। চারজন নেতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। চব্বিশ পরবর্তী সময়ে এ হামলায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ’

শাহবাগবিরোধী ঐক্যের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আজ আদালতের একটি রায় এসেছে। কিন্তু যারা এ রায় মেনে নেয়নি, তাদের আমরা সবাই চিনি। তারা ২০১৩ সালেও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে শাহবাগতন্ত্র কায়েম করে ফ্যাসিবাদের বীজ রোপণ করেছিল। চব্বিশে এসে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমাদের তা সমাধান করতে হয়েছে। ’ 

তিনি বলেন, ‘শাহবাগীরা সব সময় হাসিনা আর ভারতের ম্যান্ডেট সার্ভ করেছে। আজ আমরা বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে পরিবহন চত্বরে একত্রিত হয়েছিলাম। আমরা শাহবাগবিরোধী স্লোগান দিয়েছিলাম, তখন তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর ঢিল নিক্ষেপ করে উত্তেজিত করে তোলে। ’

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘এটা আদতে ছাত্রশিবিরের কোনো প্রোগ্রাম ছিল না। এটা শাহবাগবিরোধী ঐক্যের প্রোগ্রাম ছিল। যেহেতু এটি একটি ঐক্য, সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। এর ধারাবাহিকতায় সেখানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরির জন্য ২০১৩ সালে যারা ভূমিকা রেখেছিল, তাদের বিরুদ্ধেই আজকের কর্মসূচি ছিল। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে নিবৃত করার চেষ্টা করছে। সেখানে ছাত্র উপদেষ্টাও কাজ করেছেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করেছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেব। ’

এনডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।