ঢাকা, রবিবার, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৭ মহররম ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নীট মুনাফা ৪১ কোটি টাকা বেশি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০৬, জুলাই ১০, ২০২৫
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নীট মুনাফা ৪১ কোটি টাকা বেশি

বাগেরহাট: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়েছে রাজস্ব আয়, জাহাজের আগমন, কার্গো হ্যান্ডেলিং ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর হার।

সেই সাথে নীট মুনাফা বেড়েছে ৪১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বেলা ১২ টায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সংবাদ সম্মেলনে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন, প্রধান অর্থ ও হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার রাসেল আহমেদ খান, পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ কামাল হোসেন, বোর্ড ও গণসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামানসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে, মোংলা বন্দরের সংকট, সম্ভাবনা ও সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতা, স্বল্প সম্পদের সঠিক ব্যবহার, দ্রুত পণ্য খালাস ও বোঝাই এর সুবিধা থাকায় দিন দিন বন্ধুর ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সাথে বন্দরের আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরকার ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রতিপালনের পাশাপাশি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বন্দরের স্টেক হোল্ডার, শিপিং এজেন্টস, সি এন্ড এফ এজেন্ট স্টিভেডরসহ সব ধরনের বন্দর ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে নিয়মিত সবা করেছেন। এছাড়া বন্দরের জাহাজ আগমন বৃদ্ধির লক্ষ্যে Internal Business Development Standing Committee গঠন করা হয়েছে ফলশ্রুতিতে জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি, জাহাজের আগৃন ঘটেছে ৮৩০ টি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.৭৫% শতাংশ বেশি। এই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮.৮০ লক্ষ মেঃ টন, হান্ডেলিং হয়েছে ১০৪.১২ লক্ষ মেঃ টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫.৩২ লক্ষ মেঃ টন বেশি। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ, হান্ডেলিং হয়েছে ২১হাজার ৪৫৬ টিইইউজ।

রাজস্ব আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এই অর্থবছরে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৩ লোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, আয় হয়েছে এ অর্থবছরে বন্দরে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা।

অন্যদিকে বন্দরের নীট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২০ কোটি ৪৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে ৬২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বেশি। যা শতাংশের দিক থেকে ২০৩.৪৯% বেশি।

এই অর্থবছরে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ১১হাজার ৫৭৯ ইউনিট রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়েছে।

বন্দরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীদের অবহিত করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মোংলা বন্দরে জাহাজ জট নেই, কন্টেইনার খালাসের ক্ষেত্রে টার্ন এরাউন্ড টাইম ১.৬৬ / ৪০ ঘণ্টা। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। কন্টেইনার রাখার জন্য ০৭ টি কন্টেইনার ইয়ার্ড, টাগ বোর্ট, পাইলট বোর্ট, মুরিং বোর্ট, পাইলট ডেসপাস বোর্ট, সার্ভে বোর্ট, ড্রেজার ইউনিট ইত্যাদিসহ মবক এর বন্দরে ৩৮ টি সহায়ক জলযান রয়েছে। বন্দরের নিরাপওার ক্ষেত্রে আইএসপিএস কোড যথাযথ অনুসরণ করা হয়।

বিদেশি জাহাজ আগমন ও নির্গমনের সময় নিরাপওা প্রদানের জন্য কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল বিদ্যমান। বন্দর থেকে নিরাপদে, কম খরচে সড়ক ও নৌপথে সহজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মালামাল পরিবহনের সুবিধা রয়েছে।

বন্দর জেটির সম্মুখে ৮.৫ মিটার ড্রাফ্ট এর জাহাজ বার্থিং এর সুবিধা রয়েছে।

দীর্ঘ ১৪৪ কিলোমিটার বন্দর চ্যানেলে লাইটেড বয়া ও লাইট টাওয়ার স্হাপনের মাধ্যমে দিবারাত্রি নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নেভিগেশনাল সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য ৪৯ টি বিভিন্ন পয়েন্টে বার্দিং সুবিধা রয়েছে।

কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ১৩৪ টি আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। খুলনাস্থ রুজভেল্ট জেটিতে নিরাপদে মালামাল সংরক্ষণ ও হ্যান্ডলিং সুবিধাদি বিদ্যমান।

মোংলা বন্দরে জেটি এলাকায় ওয়ান স্টেপ সার্ভিস সুবিধা রয়েছে, সেখানে একই সাথে পারমিশন প্রদান, বিল পরিশোধ, ইনডেন্ট, ইকুইপমেন্ট বুকিং এবং টাকা পরিশোধের সুবিধা রয়েছে।

বর্তমানে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খাদ্য শস্য, সার, গাড়ি এলপি গ্যাস, স্লাগ, লাইম স্টোন, সয়াবিন তেল, ভোজ্য তেল, জ্বালানী তেল, ফ্রেশফুড, সাধারণ পণ্য, জিপসাম, মেশিনারি যন্ত্রপাতি, কাঠের লগ, কয়লা, পাথর, ক্লিংকার, পামওয়েল, ফ্লুড ওয়েল, ফ্লাই এ্যাস, আয়রন, অয়েল সীড, স্টিল পাইপ, চিটাগুড় ইত্যাদি পন্য আমদানি হয়ে থাকে।

রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, গার্মেন্টস পণ্য, পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সাদা মাছ, শুকনা মাছ, ক্লে, কাকড়া, মেশিনারি, কটনইয়ার্ন, হিমায়িত খাদ্য।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন জানান, এ বন্দর আগের তুলনায় আরো উন্নত হয়েছে, বেড়েছে সক্ষমতা। এখনো জাহাজ আগমনের হার বৃদ্ধি, বন্দরের জাটি নির্মান, ইনার বার ড্রেজিং সহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে মংলা বন্দরের সক্ষমতা আরো অনেকটাই বেড়ে যাবে। পাশাপাশি মোংলা বন্দরের সম্ভাবনাকে ঘিরে বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 

এমআরএম

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।