ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

খাদ্যপণ্য ও অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব পাবে: বাণিজ্য সচিব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৩, জুলাই ৮, ২০২৫
খাদ্যপণ্য ও অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব পাবে: বাণিজ্য সচিব বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান (ফাইল ফটো)

ঢাকা: সরকারিভাবে খাদ্যপণ্য এবং অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গম, সয়াবিন, এয়ারক্রাফটসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ আরও বোয়িং বিমান কিনবে, তুলা আমদানি বাড়াবে এবং সরকারিভাবে খাদ্যপণ্য ও অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেবে। এসব বিষয়ে ছাড় দেওয়ার বা মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো বাধা নেই।

তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনাম ২৬ ভাগ শুল্ক আরোপ কমাতে পেরেছে আলোচনার মাধ্যমে। বাংলাদেশ কেন পারেনি-এর জবাব হলো, আমাদেরও চেষ্টার কমতি ছিল না। তবে যদি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক না কমায়, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। তবুও আলোচনা চালু আছে, আমরা আশাবাদী।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল দিনটিকে ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন দেশের আমদানিপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে তিনি ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করেন। সেই মেয়াদ বুধবার শেষ হওয়ার আগেই তিনি নতুন করে একটি চিঠি পাঠান।

তিনি বলেন, ওই চিঠিতে যা বলা হয়েছে, সেটাই বর্তমান অবস্থা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আগের যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের খসড়া তারা পাঠিয়েছিল, তার ওপর আমাদের প্রতিক্রিয়া আমরা পাঠিয়েছি। সে বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। আমি ভার্চুয়ালি সব বৈঠকে যুক্ত ছিলাম। আমাদের উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং সিকিউরিটি অ্যাডভাইজারও মিটিংগুলোতে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা যে ডকুমেন্টটি পেয়েছি, সেটা আমরা আগেই চেয়েছিলাম, আজকে তারা দিয়েছে। এই ডকুমেন্টের ওপর মূল আলোচনা হবে আগামী ১০ ও ১১ জুলাই। ওই সভায় যোগ দিতেই মূলত আমি আজ যাচ্ছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, তারা একটি চিঠি দিয়ে শুল্ক আরোপ করল, এরপরই নতুন প্রস্তাব পাঠাল-এক ধরনের এক্সটেনশন বলা যেতে পারে আগের এগ্রিমেন্টের। যেহেতু এ বিষয়ে আলোচনা হবে, আলোচনা চালু থাকলে আমরা সব সময়ই কিছু না কিছু ফলাফল আশা করি।

সাংবাদিকরা জানতে চান, আপনারা কি মূলত শুল্ক কমানোর জন্য আলোচনা করতে যাচ্ছেন? এর জবাবে সচিব বলেন, আমরা যে আলোচনা করব, সেখানে আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে পাল্টা শুল্ক যেন না থাকে এবং অন্যান্য শর্তগুলো যেন আমাদের জন্য সহনীয় হয়।

আপনাদের যুক্তিগুলো কী কী থাকবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, মোটাদাগে আমাদের যুক্তিগুলো থাকবে-প্রথমত শুল্ক কমানো, দ্বিতীয়ত ট্রেড রিলেটেড বিভিন্ন ইস্যুতে যেন বাংলাদেশ অসুবিধাজনক অবস্থায় না পড়ে। আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো বাংলাদেশের বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের বিদ্যমান বাজার ধরে রাখা।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে তারা কিছু শর্ত দিয়েছে-তা হলো পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি এবং রেগুলেটরি ডিউটি কমানোর প্রস্তাব। আমরা এনবিআর ও সরকারের অন্যান্য অংশের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।  

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আজকের চিঠিতে তারা যেসব ছাড় চেয়েছে, তার অনেকটাই আমরা ইতোমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। যেমন—গম, সয়াবিন, এয়ারক্রাফট, অন্যান্য মেশিনারির ওপর এমনিতেই আমাদের শুল্ক অনেক কম। সেই জায়গা থেকে কিছু ছাড় দেওয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব।

কীভাবে এবং কোন ক্ষেত্রে ট্রেড বাড়ানো হবে? এমন প্রশ্নে মাহবুবুর রহমান বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র কিছু শুল্ক ছাড় দেয়, তাহলে বেসরকারি খাতে ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে সরকারি পর্যায়ে ট্রেড বাড়ানোর জন্য আমরা কিছু ফ্যাসিলিটি তৈরি করব।

বাণিজ্য সচিব বলেন, সরকারি পর্যায়ে খাদ্য ও পানীয় কেনার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাছাড়া আমাদের সামরিক সরঞ্জামের একটি বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়। সেসব ক্ষেত্রেও বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।  

সামরিক সরঞ্জাম বলতে কি অস্ত্র বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমরা মিলিটারি হার্ডওয়্যার বলতে বুঝি-আমাদের ভেহিকেল, আর্মড ভেহিকেল এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ। এগুলোর বেশিরভাগই আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই, বরং তারা বলেছে—যখন আমরা কিনব, যেন তাদের গুরুত্ব দিই। অন্য মেশিনারির ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছে। তাতে আমাদের আপত্তি নেই।

তুলার ওপর এআইটি নিয়ে এক প্রশ্নে তুলার ওপর ২ শতাংশ অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স নতুন নয়, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল খাতের স্টেকহোল্ডাররা সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন। তবে বাই-লেটারাল ট্রেডে এটির তেমন প্রভাব নেই। এটি ইমপোজ করা হয়েছে ঠিকই, তবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কিছু ছাড় দেওয়া হয়। ফলে আমেরিকান তুলার ক্ষেত্রেও কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে বলেও যোগ করেন বাণিজ্য সচিব।

নতুন শুল্ক আরোপের বিষয়ে গতকাল সোমবার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এপ্রিলের স্থগিত করা শুল্ক ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করা চিঠিতে ট্রাম্প জানান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

এদিকে, গত ২৬ জুন ওয়াশিংটনে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খালিলুর রহমান। এরপর ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হয়, যেখানে অংশ নেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

ট্যারিফ আরোপ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিযোগিতাসক্ষমতা অটুট রাখা নিয়ে সংবেদনশীল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলোর শুল্ক শূন্য বা শূন্যের কাছাকাছি। তারপরও তারা কিছু প্রোডাক্ট লাইনে শুল্ক সুবিধা চায়। একইসঙ্গে তারা শুল্ক আরোপ করতেও চায়। সেক্ষেত্রে যেন প্রতিযোগিতায় থাকা যায়, সে বিষয়ে তারা সংবেদনশীল বলেও জানান মাহবুবুর রহমান।  

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক পণ্য রপ্তানিতে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এই উচ্চ শুল্ক হার সত্ত্বেও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় বেশি। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থমূল্যে হিসাব করলে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।

জিসিজি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।