ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৫ জুন ২০২৫, ০৮ জিলহজ ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজেট বিশ্লেষণ

এবার চমকপ্রদ কিছু করার সুযোগ নেই

এম মাশরুর রিয়াজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:১২, জুন ৩, ২০২৫
এবার চমকপ্রদ কিছু করার সুযোগ নেই এম মাশরুর রিয়াজ

ঢাকা: এবারের বাজেটে চমক দেখানোর বা বড় কোনো পরিবর্তন আনার সুযোগ কম। কারণ বর্তমান সরকার একটি অরাজনৈতিক সরকার।

আমরা সবাই আশা করছি, আগামী বছরের শুরুতেই পলিটিক্যাল ট্রানজেকশন হবে। পার্লামেন্ট না থাকায় বাজেটে চমক দেখানো কঠিন।

আরেকটি কারণ, বর্তমানে আমাদের সামগ্রিক রাজস্বের অবস্থা ভালো নয়। অর্থনীতির চাকা ধীরগতিতে এগোচ্ছে, তাই রাজস্ব সংগ্রহে বড় উন্নতি আশা করা যায় না। আমাদের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বহু বছরের নীতি ও কাঠামোগত সমস্যার কারণে কর্মসংস্থানও ধীরগতিতে আছে। এগুলোকেই মাথায় রেখে এবারের বাজেট থেকে খুব বড় কিছু আশা করাটা বাস্তবসম্মত নয়।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সামষ্টিক অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ, সেটিকে মাথায় রেখে বাজেটে তার আকারটিকে ছোট রেখেছে। আমরা এটিকে সাধুবাদ জানাই। এর সঙ্গে রাজস্ব বাজেটকে আমার মনে হয় আরো কমিয়ে আনা যেত। কারণ আমরা দেখতে পেয়েছি, মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো হবে এবং এই মহার্ঘ ভাতার একটি প্রভাব এবারের রাজস্ব বাজেটে বেতন-ভাতায় পড়বে।

বেতন-ভাতায় খরচ হবে প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া বা বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি বরং কৃচ্ছ্রসাধনের সময় ছিল, সেই জায়গায় মনে হয় বাজেটের আকার রাজস্ব বাজেটে আরো কমানো যেত। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি আগেরবারের চেয়ে কম রাখা হয়েছে, সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সেই জায়গায়ও (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) আরেকটু রক্ষণাত্মক হওয়া যেত এই বছরটির জন্য।

খাতভিত্তিক যদি আমরা দেখি, তাহলে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ভবন নির্মাণে। সাড়ে ১৬ শতাংশ ভবন নির্মাণেই বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সার্ভিস ডেলিভারির জন্য ভবনের প্রয়োজন হয়, তবে এমন একটি সময় প্রবৃদ্ধি কম হবে, রাজস্ব আদায় কম হবে এই অবস্থায় ভবন নির্মাণে এত বেশি বরাদ্দ রাখাটা আরো দেখার সুযোগ আছে।

এবার বাজেটে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি মাথায় রেখে সামাজিক নিরাপত্তাজাল বাড়ানো হয়েছে। এর আওতা বাড়িয়ে প্রায় ১০ লাখ স্বল্প আয়ের মানুষকে এর আওতায় আনা হচ্ছে। আমি মনে করি, এটি খুবই ভালো দিক। কিন্তু সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তাজালকে ঢেলে সাজানো এবং এটির কার্যকরী, দক্ষতা ও লক্ষ্যবস্তু এগুলো বাড়ানো প্রয়োজন। সেগুলোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল। সেই জায়গায় সরকারের বিনিয়োগ আছে বলে আমরা দেখছি না।
বর্তমানে বেসরকারি খাতে গ্যাসনির্ভর শিল্পগুলো জ্বালানি সমস্যায় ভুগছে।

আমরা গত কয়েক বছরে ভুল নীতির কারণে আমদানিনির্ভর হয়ে গেছি। এটি সহসা কমানো যাবে না। শিল্পে বাড়তি গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে এবার বাজেটে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। ছয় হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এবার ভর্তুকি কমিয়ে আনা হয়েছে। এটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। গত বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সেটি প্রায় ৬২ হাজার কোটিতে চলে গেছে। ভর্তুকিটা যাতে যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়, সেটি নিশ্চিত করা। কারণ বছরের মাঝে গিয়ে আবার যেন ভর্তুকি বেড়ে না যায়, সেই দিকে লক্ষ্য রাখা। খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। এতে ন্যায্য মূল্যে বা স্বল্প মূল্যে খাদ্য সরবরাহ কার্যক্রম আরো বাড়বে।

ভর্তুকি বাড়িয়ে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এটিকেও আমরা সাধুবাদ জানাই। কারণ আমাদের যে মূল্যস্ফীতির অভিঘাতটা আছে, সেটি থেকে নিম্ন আয়ের ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। রপ্তানিতে ভর্তুকি সাদ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে, যা গত বছরের মতো একই রয়েছে। তবে এখানে এবার কিছুটা কমানো উচিত ছিল, কারণ ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে এই জায়গায় আর ভর্তুকি দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই এই বছর থেকেই ভর্তুকির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনতে পারলে হয়তো ভালো হতো।

বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য আমরা তেমন কিছু দেখছি না। সরাসরি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয় এ ধরনের কোনো আলাদা উদ্যোগও আমরা দেখছি না।

দেশে দিন দিন বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। সাড়ে ২৫ লাখ থেকে বেড়ে ২৭ লাখ হয়েছে বেকারত্বের সংখ্যা। গত জুলাই থেকে এপ্রিলের মধ্যে দরিদ্রের সংখ্যাও বেড়েছে। তাই এই জায়গাটিতেও নজর দেওয়া উচিত ছিল। বেসরকারি খাতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভালো কিছু উদ্যোগ রয়েছে। অ্যাগ্রিবিজনেসে কোল্ড স্টোরেজের ট্যাক্স কমিয়ে নিয়ে আসা হবে ১ শতাংশে। শিল্পের কাঁচামালের ওপর অগ্রিম ট্যাক্স সেটিও কমিয়ে আনা হবে। শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল কেমিক্যাল আমদানিতেও শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। সফটওয়্যার আমদানিতেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। এগুলো বেসরকারি খাতকে সহায়তা করবে। তবে ই-কমার্স বা অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হবে। আমি মনে করি, এটি মনে হয় ঠিক হচ্ছে না।

লেখক: চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।