ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) চলতি বছরের শেষের দিকে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
বাণিজ্য সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে প্রথম দফার আলোচনা জুলাইয়ের শেষের দিকে ঢাকায় শুরু হবে।
রোববার (১ জুন) রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বাণিজ্য সচিব কোরিয়া-বাংলাদেশ বিনিয়োগ সেমিনারে এ কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশে কোরিয়ান দূতাবাস এবং ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) যৌথভাবে ঢাকার একটি হোটেলে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে উভয় দেশের ব্যবসায়ী, কূটনীতিক এবং উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুবুব রহমান বলেন, ইপিএ চূড়ান্ত করার আগে প্রায় ছয় থেকে সাত দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবিত ইপিএতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য শুল্ক যুক্তিসঙ্গতকরণ, বিনিয়োগ, আঞ্চলিক মূল্য সংযোজন, পরিষেবায় বাণিজ্য এবং অন্যান্য উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আমদানি ও বাণিজ্য সহজ করার জন্য এর নীতিমালা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন বাণিজ্য সচিব।
তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে, দেশে স্মার্টফোন সেটের ধূসর বাজারে বিক্রি রোধ করার জন্য সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে স্মার্টফোন আমদানির ওপর শুল্ক কমাতে পারে।
ঢাকায় নিযুক্ত কোরীয় রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া বেশিরভাগ কোরিয়ান খুবই অবাক হবে যে, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং আগামী ২০৩০ সালে নবম বৃহত্তম ক্রয়ক্ষমতা হিসাবে আবির্ভূত হবে।
রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক আরও বলেন, বাংলাদেশ তরুণ জনসংখ্যার সাথে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ উপভোগ করছে। বিশাল পরিসরে তার বাজার সম্প্রসারণ করছে এবং দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযোগকারী কৌশলগত অবস্থান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কীভাবে বাস্তবায়িত করা যায়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার বলেন, বাংলাদেশ গত ২০ বছরেও শুল্ক যুক্তিসঙ্গত করতে পারেনি এবং এ কারণেই দেশটি এখনও অত্যন্ত বাণিজ্য-নিয়ন্ত্রক দেশ।
তিনি বলেন, আজ জাতীয় বাজেটে অন্তত কিছু শুল্ক যুক্তিসঙ্গতকরণের বিকল্প দেখা যাবে।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেন, ভিয়েতনাম বিশ্বের প্রায় অর্ধেকের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই করেছে। এজন্য এর বার্ষিক রপ্তানি মূল্য প্রায় চারশ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির জিডিপি ৪৭০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের কান্ট্রি ম্যানেজার জং মিন অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে ধূসর বাজার আধিপত্য বিস্তার করছে। ধূসর ডিভাইসগুলো দামের সুবিধার জন্য কর ফাঁকি দিচ্ছে এবং সরকার রাজস্বের সুযোগ হারাচ্ছে।
বাংলাদেশে কর্মরত কোরিয়ান কোম্পানি কিডোর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জং হো বলেন, আদমজি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের অভ্যন্তরে অবস্থিত চার হাজার দুইশ কর্মীর মধ্যে ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের জন্য তার কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করবে। কারণ ভিয়েতনামে উৎপাদন খরচ বাংলাদেশের তুলনায় বেশি।
সেমিনারে কোরিয়ান ব্যবসায়ীরা বলেন, অস্থিতিশীল সরকার, অর্থনীতি, সড়ক অবরোধ, শুল্ক ছাড়পত্রে বিলম্ব বাংলাদেশের ব্যবসার প্রধান চ্যালেঞ্জ।
ঢাকায় কোরিয়ান দূতাবাসের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং একই বছরে ৬৪৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
পিএ/এএটি