ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রেজেন্টেশন নিয়ে প্রশংসার কিছু নেই, এটাই আমার জব: আশিক চৌধুরী

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
প্রেজেন্টেশন নিয়ে প্রশংসার কিছু নেই, এটাই আমার জব: আশিক চৌধুরী বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী

সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে হয়ে গেল চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন। এই সম্মেলনে প্রেজেন্টেশন দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিডার নবনিযুক্ত নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।

এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় এই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।  

এর আগের কোনো সম্মেলনে এমন দুর্দান্ত প্রেজেন্টেশন হয়নি বলে মন্তব্য নেটিজেনদের। এছাড়া আয়োজন নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তবে নিজেকে বা এই আয়োজন দশে দশ পাওয়ার মতো হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আশিক চৌধুরী। তার ভাষ্য, প্রেজেন্টেশন নিয়ে আলাদা প্রশংসা করার কিছু নাই, এটাই তার দায়িত্ব বা চাকরি।  

এছাড়া তিনি জানিয়েছেন, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে।  

আজ রোববার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে এসব কথা জানান আশিক চৌধুরী। স্ট্যাটাসে বিনিয়োগ সম্মেলনের চার দিনের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।

তার সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো -

‘চার দিনব্যাপী ইনভেস্টমেন্ট সামিট শেষ হলো। দশে দশ পাবার মতো হয়নি সব ক্ষেত্রে। কারো যদি হতাশা থাকে তার জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। আমরা গত তিনমাস ধরে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মাফিক একটা সামিট করার জন্য। এই সামিটের অর্গানাইজার অবশ্য সরকার একা ছিল না। মিডিয়া কমিউনিটি, প্রাইভেট সেক্টর, অ্যাম্ব্যাসি, ফরেন পার্টনার, পলিটিক্যাল পার্টিরা, সরকারের অন্যান্য সংস্থা সবাই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। যতটুকু ভালো, পুরোটাই সবার ক্রেডিট। ব্যর্থতাগুলো আমাদের। সামনে আমরা আরো ভালো করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। যেরকম সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা খুবই আশাবাদী। প্রতি বছর আমাদের এরকম কিছু একটা অর্গানাইজ করা উচিত। প্রাসঙ্গিক একটা কথা বলে রাখি এখানে। অনেকেই সামিটের পলিটিক্যাল অনুমোদন এবং ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। দেখুন, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান আগামীবার যারা সংসদে আসবেন তাদের সবার কমন এজেন্ডা। আমি আগেও বলেছি, বড় সব দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ কীভাবে তৈরি করা যায়, সামিট ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের স্পষ্ট সমর্থন ও সামিটে অংশগ্রহণের জন্য স্পেশাল ধন্যবাদ। সামিট কি সফল হয়েছে বা সামিটের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব আপনারা দেবেন। মার্কেট দেবে। সময় দেবে। এই মুহূর্তে সামিটের সাফল্যকে দুইভাবে আমরা মাপার চেষ্টা করতে পারি। স্ট্যাটিসটিকালি বা একেবারেই নাম্বার দিয়ে। ’

‘মোট অংশগ্রহণ: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোট উপস্থিত ছিলেন ৭১০ জন। ৪১৫ জন বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি। বাকিরা দেশি ব্যবসায়ী বা সরকারি সচিব বা তদূর্ধ্ব। এছাড়াও ব্রেকআউট সেশনগুলাতে মত অংশগ্রহণ করেছে সাড়ে তিন হাজারের চেয়েও বেশি। এর বাইরেও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই কয়দিন অনেকে এসেছেন ইনভেস্টরদের সঙ্গে করিডোরে দেখা করার জন্য।  মোট প্যানেলিস্ট: ১৩০ জন অফিসিয়ালি দ্বিপাক্ষিক মিটিং হয়েছে: ১৫০টি। বাণিজ্য উপদেষ্টা, স্পেশাল অনভয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, এমন অনেকেই সারাদিন ছিলেন ভেন্যুতে। এম ও ইউ সাইন: ৬টি। কিছু ইমিডিয়েট (যেমন আইএলও) কিছু লং টার্ম (যেমন আর্টেমিস)। ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা: হান্ডা গ্রুপ ও শপ আপ মিলে মোট ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার।  বাংলাদেশ সরকারের সামিটে খরচ: ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পার্টনার সংস্থা থেকে অনুদান পেয়েছি আমরা আরো সাড়ে ৩ কোটি টাকা। ’ 

‘এগুলোর বাইরে আমি দুটি কোয়ালিটেটিভ পয়েন্ট শেয়ার করতে চাই: 
১. বিদেশিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে পার্সেপশন বা ধারণা: আমরা আগেও বলেছি, বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট একদিনে আসে না। সামিটে এসে ইমোশনাল হয়ে কেউ হুট করে ১০০ কোটি টাকার চেক লিখে ফেলে না। যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে করেন তারা জানেন। কিন্তু বাংলাদেশ যদি প্রথম ধাপেই মেনু থেকে বাদ পড়ে যায় নেগেটিভ ধারণার জন্য তাহলে খেলা শুরু হবার আগেই আমরা হেরে গেলাম। বিদেশে বসে গুগল সার্চ করলে আমাদের নিয়ে যে পারসেপশন তৈরি হয়, সেটা রিয়েলিটির চেয়ে অনেক বেশি নেগেটিভ। অনেকেই অনেক ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছেন। যেমন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ব্যবসায় বান্ধবতা ইনডেক্সে নাকি এখনো আমাদের র‍্যাংকিং ১৬৭। প্রথমত, এই র‍্যাংকিং ২০২১ সালের। দ্বিতীয়ত, র‍্যাংকিং প্রসেস এ অনেক ভুল পাওয়া যাওয়ায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক নিজেই এটা ডিসকনটিনিউ করে দিয়েছে। এটাকে এখনো অনেকে রেফার করেন। আসলে আমাদের দেশের পজিটিভ নেগেটিভ দুইটাই আছে। পৃথিবীর সব দেশেরই তাই। সেই দুঃখে কি আমরা বাংলাদেশকে মার্কেট করা বন্ধ করে দেব? ইনভেস্টরদের বলব, ভাই আপাতত আসার দরকার নাই, আমরা আগে সব ঠিক করে নেই প্লিজ? আমি তা মনে করি না। বিডার একটা প্রাথমিক দায়িত্বই তো দেশকে প্রমোট করা। আমাদের একই সঙ্গে ইস্যুগুলো সলভ করা, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন করা আর দেশকে প্রমোট করা চালিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যত বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে বাংলাদেশ ২.০ কেন আগের থেকে আলাদা এবং আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমরা কি কি ইনিশিয়েটিভ নিয়েছি। যিনি এই সামিটে বাংলাদেশে প্রথম এসেছেন, তার ইনভেস্ট করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো সম্ভাব্য বিনিয়োগের একটা পাইপলাইন তৈরি করা। তাদেরকে আমরা ট্র্যাক করব। সাহায্য করার চেষ্টা করব। কনভিন্স করার চেষ্টা করব। অনেকেই আসবেন না। কিন্তু আমাদের চারদিনের দৌড়ঝাঁপে যদি ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় আর বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশিদের ধারণা একচুলও বদলায়, তাহলে আমাদের আনন্দের শেষ থাকবে না। ’
 
‘২. দেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস: বারাক ওবামার একটা বই আছে: দ্যা অডাসিটি অব হোপ (আশার দুঃসাহস)। আমাদের দেশের মানুষকে একটু সুযোগ করে দিলে, উৎসাহ যোগালে আর একটু পজিটিভিটি ইনজেক্ট করতে পারলে তারাই আমাদের দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তারা দেশ ছাড়ার কথা না ভেবে দেশ গড়ার কথা ভাববে। আমরা একটা পজিটিভ মোমেন্টাম আনার চেষ্টা করেছি এই সামিটের মাধ্যমে। এই ধ্যান-ধারণার ওপর ভিত্তি করে সামিটের দিনগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছিলো: ৭-৮ তারিখে বিনিয়োগকারীদের ইপিজেড ও ইকোনমিক জোন ঘুরিয়ে বিনিয়োগ ব্যবস্থার আসল চিত্রটা তুলে ধরা হয়েছে। স্টার্টআপদের জন্য আলাদা সেশন করা হয়েছে। ৯ তারিখ সকালে বিনিয়োগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ভবিষ্যত পরিকল্পনা আর আমাদের অ্যামবিশনের কথা শেয়ার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় আমাদের শত বছরের পুরোনো সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৯-১০ তারিখের বাকি সময়টা ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট, সরকার, পলিটিক্যাল পার্টি, মিডিয়া, লোকাল বিজনেস আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেটওয়ার্কিং ফ্যাসিলিটেট করা হয়েছে। আর পুরো সময়টা ধরে চলেছে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর। ফাইনালি, সামিট উপলক্ষে আমরা একটা বাংলাদেশের থিমেটিক ম্যাপ ডিজাইন করেছিলাম; শিল্পায়ন আর জাতীয় সত্ত্বাকে সামনে রেখে। সবাইকে ব্যবহারের জন্য শেয়ার করলাম। ভালো রেজোলিউশন এর ফাইলের লিংক কমেন্টে আছে। বিডার কপিরাইট। তার মানে আপনাদের সকলের কপিরাইট। যেখানে খুশি ব্যবহার করুন। আমার প্রেজেন্টেশনটাও তাই। যেখানে খুশি ব্যবহার করুন নিজের মনে করে। প্রেজেন্টেশনটা নিয়ে অনেক কথা হয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আমি ছোট্ট করে একটু বলতে চাই: প্রেজেন্টেশনের পেছনে অনেকে কষ্ট করেছেন। তারা সবাই এটার কারিগর। সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকে অনেক প্রশংসা করেছেন এবং ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন আমাকে। সেজন্যে অনেক ধন্যবাদ। আমি জাস্ট আমার বেসিক চাকরিটা করছি। ইনভেস্টমেন্ট সামিট প্রসেস এর মাত্র প্রথম ধাপ। এটার জন্য আলাদা কোনো বাহবা পাবার আশা আমি একদম করি না। কাজগুলো কমিটেড সময়ের মধ্যে হচ্ছে কিনা, এর জন্য আমাদের অ্যাকাউন্টেবল করুন। আর এই সামিটে প্রেজেন্টেশনটা মধ্যমণি না। মধ্যমণি হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আর আমাদের উদ্যোক্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ’ 

‘পুনশ্চ ১: সামিট নিয়ে ইনফর্মেশন প্লিজ ভেরিফায়েড সোর্স থেকে নেবেন। ভুল তথ্যের শিকার হবেন না। আমাদের জিজ্ঞেস করুন। আমরা উত্তর দেবার চেষ্টা করব।  
পুনশ্চ ২: আমাদের পার্টনারদের ছাড়া এই সামিট সম্ভব হতো না: CA press wing, Ministry of Cultural Affairs, World Bank, UNDP, European Union, Dutch Embassy, FICCI, BGMEA, Citi, HSBC, Lightcastle Partners, Inspira, Sajida Foundation, EBL, IMS and High Voltage

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।