ঢাকা, সোমবার, ২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৫
৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ কথা বলছেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

ঢাকা: আগামী ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫’ পালন করবে সরকার। এ সময়ে জাটকা ধরা বন্ধ, অবৈধ জাল তৈরি, পাচার, অবৈধ পরিবহন ও মজুদদারি রোধে কাজ করবে সরকার।



সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এ সরকার কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পালন করা হবে। এবার জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে’। জাটকা হচ্ছে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট আকারের ইলিশ। এক কেজি ওজনের ইলিশ কমপক্ষে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এবং দুই কেজির অধিক হলে ৬০-৬২ সেন্টিমিটার হবে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মাধ্যমে জাটকাকে ইলিশে রূপান্তর করা হবে।

উপদেষ্টা ফরিদা বলেন, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে পাঁচ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। দেশজ জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।

ফরিদা আখতার বলেন, এ দেশের প্রায় ছয় লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০-২৫ লাখ লোক ইলিশ পরিবহন, বিক্রি, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

উপদেষ্টা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন,  জাটকা আহরণ, কেনাবেচা এবং খাওয়া থেকে বিরত থেকে জাতীয় মাছ ইলিশের উন্নয়নে এগিয়ে আসবেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ’ সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার দেশের ইলিশসমৃদ্ধ ২০টি জেলায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে সাত দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় এবং মাঠপর্যায়ে অর্থাৎ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উপযোগী কর্মসূচি পালিত হবে। এবার জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ৮ এপ্রিল বরিশাল বিভাগের ইলিশসমৃদ্ধ অন্যতম জেলা বরিশালের সদর উপজেলার বেলস্ পার্কে অনুষ্ঠিত হবে এবং বরিশাল সদর উপজেলার ডিসি ঘাট সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে নৌ-র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ইলিশ সম্পদ রক্ষা ও উন্নয়নে সরকার বর্তমানে যেসব কার্যক্রম নিয়েছে, সেগুলো: 

জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ, এর আওতায় প্রতিবছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন করা হয়ে থাকে।

ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় নির্ধারণ করে মা ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধ সময় ২২ দিন করা হয়েছে।

ইলিশের পোনা জাটকা যেন নিরাপদে বাড়তে পারে তাই ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী জাটকা ধরা, পরিবহন, মজুদ, কেনা-বেচা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দেশের ইলিশসমৃদ্ধ প্রধান প্রধান নদ-নদীতে ছয়টি ইলিশ অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে এবং এ অভয়াশ্রমে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়।
মা ইলিশ এবং জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের জীবনধারণের জন্য প্রতিবছর ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবং জাটকা আহরণে বিরত অতি দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চাহিদামাফিক বিভিন্ন ধরনের উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।

ইলিশসহ উপকূলীয় অন্যান্য মৎস্য প্রজাতি ও জলজ জীব রক্ষায় ২০১৯ সালে নিঝুম দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় তিন হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

জেলে ও মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন যুগোপযোগী করার নিমিত্ত সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদন বাড়াতে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় দুটি দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে মোট ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।

ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে সরকারের নানামুখী সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‍্যাব, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অধিদপ্তরে সম্মিলিতভাবে আইন বাস্তবায়ন করা হয়। সরকার মৎস্য সংরক্ষণ আইনের সময়োপযোগী সংশোধন করেছে। জাটকাকে ইলিশে পরিণত করার জন্য এই নিষিদ্ধ সময়ে সাগরের উপকূলবর্তী এলাকাসহ সব নদ-নদী, মাছ ঘাট, মৎস্য আড়ত ও বাজারে অবিরত অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় চলমান কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে বছরজুড়ে ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এবার বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৫
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।