ঢাকা, শনিবার, ২ কার্তিক ১৪৩২, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাস চালক হত্যা: ছয় বছরেও শনাক্ত হয়নি খুনি

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:২৪, অক্টোবর ১৮, ২০২৫
বাস চালক হত্যা: ছয় বছরেও শনাক্ত হয়নি খুনি ...

চট্টগ্রাম: ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন ব্যক্তি মহাসড়কে থামান একটি যাত্রীবাহী বাস। তাদের হাতে ছিল পিস্তল, হাতকড়া, টর্চলাইট ও ওয়াকিটকি।

বাস থেকে চালককে নামিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন তারা। এরপর চলে যান একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেট কার ও একটি জিপে করে।

ছয় বছর আগে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর দক্ষিণ পাড়ের শিকলবাহা ব্রিজ এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনায় গত মাসের শেষের দিকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি সত্য হলেও কারা এ ঘটনায় জড়িত তা শনাক্ত করা যায়নি। ডিবি পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত নয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

নিহত চালকের নাম জালাল উদ্দিন। তিনি দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা। ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল রাতে তাঁকে হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির পরিবার ও সহকর্মীরা বলেছেন, ছয় বছরেও খুনিদের শনাক্ত করতে না পারা পুলিশের চরম ব্যর্থতা। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা। মামলার বাদী জানিয়েছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর আদালতে নারাজি আবেদন করবেন। আগামী ৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন গ্রহণের শুনানি হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. মুছা বলেন, দুই দফা তদন্তেও খুনিদের শনাক্ত করা যায়নি-এটা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য। জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

নিহতের স্ত্রী ইলিনা খানম বলেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে বড়জন প্রতিবন্ধী, অন্য দুজন ছোট। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাব-অনটনে সংসার চলছে। বিচার দূরে থাক, পুলিশ ছয় বছরে খুনিদেরই চিহ্নিত করতে পারেনি। গরিব বলে কি আমরা বিচার পাব না?

মামলার নথি ও নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্রে জানা যায়, জালাল উদ্দিন শ্যামলী পরিবহনের বাস চালক ছিলেন। ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল রাতে কক্সবাজার থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে বাসটি ছাড়ে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ব্রিজ এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চারজন ব্যক্তি বাসটি থামান। ইয়াবা থাকার অভিযোগ তুলে চালককে হাতকড়া পরিয়ে মারধর করতে থাকেন। উপস্থিত ছিলেন আরও ১০-১২ জন। একপর্যায়ে চালককে আহত অবস্থায় ফেলে তারা চলে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিহতের পিঠ, কোমর, হাঁটু ও কবজিতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় জালালের ছোট ভাই জুয়েল হোসেন বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় হত্যা মামলা করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাসের সুপারভাইজার আজিম উদ্দিন ও স্থানীয় এক দারোয়ান আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁরা বলেন, চালককে মারধরকারীদের হাতে ছিল পিস্তল, হাতকড়া ও ওয়াকিটকি। বয়স আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, কেউ কারও নাম উচ্চারণ করেননি।

তিন বছর তদন্ত শেষে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার সিনহা ২০২২ সালের ১৬ জুলাই প্রথম চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। তাতে বলা হয়, জালালের মৃত্যু মারধরের ফলে, তবে জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ বা গাড়ির নম্বরও পাওয়া যায়নি।

বাদী তখন আদালতে নারাজি আবেদন করলে পুনরায় ডিবি পুলিশকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ডিবির উপপরিদর্শক জয়নাল আবেদীনও একই মত দেন-ডিবি পুলিশ জড়িত নয় এবং কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি। জয়নাল আবেদীন বলেন, মারধরে মৃত্যু হয়েছে, এটি সত্য। কিন্তু জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, তাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

বাদী জুয়েল হোসেন বলেন, দুই দফা তদন্তে বলা হচ্ছে ডিবি পুলিশ জড়িত নয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে যারা এ কাজ করেছে তারা কারা? ব্যস্ত সড়কে সাধারণ অপরাধীরা এমন কাজ করতে পারে না। আমাদের একটাই দাবি-চিহ্নিত করে খুনিদের বিচার করা হোক।

এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।