চট্টগ্রাম: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. কেএম কবিরুল ইসলাম বলেছেন, বর্তমান সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে সম্প্রতি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার তিনটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। তা ছাড়া কারিগরি শিক্ষাকে কীভাবে যুগোপযোগী করে শিল্পের চাহিদানুযায়ী দক্ষ শিক্ষার্থী গড়ে তোলা যায় সে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক ‘হাই-লেভেল পলিসি ডায়লগ অন ফিউচার স্কিলস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগে কোরিয়ানরা কারিগরি শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে আসত এখন উল্টো আমাদের এখন তাদের দেশে যেতে হচ্ছে। দেশে প্রতিবছর ১২ লাখ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। কিন্তু, চাকরি হচ্ছে ২ লাখের। আবার তাদের নেই কোনো উন্নত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা। কিন্তু, এই কারিগরি শিক্ষায় ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতা পেলে তা হয়ে উঠবে দক্ষ কর্মী গড়ার প্রতিষ্ঠান। দেশে প্রায় ৮০ লাখ কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রযুক্তি ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মূলধারার কর্মমুখী শিক্ষায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।
আইএলওর প্রোগ্রেস প্রকল্পের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কারিগরি শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শোয়েব আহমদ খান, কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শামসুর রহমান খান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, আইএলও চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর এবং অফিস ইনচার্জ পিটার বেলেন, ব্যবসায়ী ও সংগঠক একরামুল করিম চৌধুরী, ডায়গনস্টিক ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. একেএম ফজলুল হক, উইম্যান চেম্বারের পরিচালক আমেনা শাহিন ও সাবেক সহ-সভাপতি আইভি হাসান, লুব-রেফের এমডি মোহাম্মদ ইউসুফ, কনফিডেন্স সিমেন্টের এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ, টিকে গ্রুপের পরিচালক জাফর আলম, র্যানকন এফসি লিমিটেডের সিইও তানভীর শাহরিয়ার রিমন, বিপিজিএমইএর পরিচালক শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, ম্যাফ সুজের নির্বাহী পরিচালক শাহাদাত উল্লাহ, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের উপদেষ্টা ওসমান গণি চৌধুরী ও বিএসআরএম গ্রুপের রবিউল হাসান।
শোয়েব আহমদ খান বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করার জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ ও নতুন জনবল নিয়োগ দিচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সব প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবমুখী কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য ইন্ডাস্ট্রির সাথে অধিক যোগাযোগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শামসুর রহমান খান বলেন, কারিগরি শিক্ষার্থীরা যদি ভালো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করে তাহলে তারা দ্রুত দক্ষ কর্মীতে পরিণত হবে। তাই তাদের দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে কারখানা ও শিল্প মালিকদের মতামতের ভিত্তিতে কোর্স প্ল্যান করছি।
মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, প্রতিটি চাকরি পরীক্ষায় লাখ লাখ কর্মী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। অথচ কারিগরি সেক্টরে কর্মীর সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের চাকরি দ্রুত হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে স্কিল গ্যাপ রয়েছে তা নিরসনে আমরা কাজ করছি।
চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, দেশের শিক্ষা খাতের মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যয় হয় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে। যদিও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরও সরকার আন্তরিকতার সাথে এই সেক্টরের উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতকে সহায়তার জন্য কাজ করছে।
পিটার বেলেন বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছে। তার মধ্যে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদানুযায়ী সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রণয়ন, ইন্ডাস্ট্রির মানদণ্ড অনুযায়ী প্রশিক্ষক তৈরি এবং ইন্ডাস্ট্রির এটাচমেন্টের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি।
ইন্ডাস্ট্রি একাডেমি এবং সরকারের সাথে সমন্বয় করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে চেম্বারের মতো প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
এআর/পিডি/টিসি