ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ৩০ জুন ২০২৫, ০৪ মহররম ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘অভ্যুত্থানে শিক্ষকদের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় চবির বাংলা বিভাগে ফলাফল ধস’’

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:০৬, জুন ২৯, ২০২৫
‘অভ্যুত্থানে শিক্ষকদের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় চবির বাংলা বিভাগে ফলাফল ধস’’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষকদের নীরব ভূমিকা ও আন্দোলন পরবর্তী বিভাগের বিভিন্ন সংকট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম আমরা। এ কারণেই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে শিক্ষকরা একযোগে স্নাতকোত্তরের পুরো ব্যাচের ফলাফল ধসিয়ে দিয়েছেন।

আমাদের সঙ্গে হওয়া এ অন্যায়ের দ্রুত প্রতিকার চাই। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যয়নের সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানাই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ফলাফলে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন।

রোববার (২৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় চবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে বাংলা বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের ব্যানারে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।  

আন্দোলনকারীরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ফলাফল বিপর্যয়ের অভিযোগ তুলেছেন। এসময় তারা বাংলা বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের অবিচারমূলক ফলাফল বাতিল ও পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যয়নের দাবি জানান।  

মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ধ্রুব বুড়ুয়া। এতে সংহতি জানিয়ে বিভাগটির অন্যন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন মানববন্ধনে।  

এর আগে গত ২৪ জুন একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে বনিবনা না হলেই রেজাল্ট ধ্বসিয়ে দেয়ার ঘটনা শুধু এক বিভাগে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগের চিত্রই এমন। একজন শিক্ষক তার স্বৈরাচারিতার সর্বোচ্চটুকু প্রয়োগ করেন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতার ওপর। শিক্ষার্থীরাই দিনের পর দিন এমন মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি করাই হতে পারে একমাত্র সমাধান।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা মিমি বলেন, আমাদের অনার্সের ফলাফলে যেখানে সিজিপিএ ৩.০০ এর কম পেয়েছিলো মাত্র ৬-৭ জন। সেখানে মাস্টার্সে এসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ এরও বেশি। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এতোগুলো শিক্ষার্থী মেধাহীন হয়ে গেলো? আমরা সাধারণত দেখি অনার্সের চাইতে মাস্টার্সের ফলাফল ভালো হয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা এমন অবস্থা করেছে যে এ ফলাফল দিয়ে আমরা চাকরির বাজারে আবেদনই করতে পারব না। আবেদন করতে পারলেও আমাদের এ ফলাফলের কারণে ঠিকভাবে মূল্যয়নও করবে না।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেক সহপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে শিক্ষকরা সবাইকে এমন ফলাফলের মুখোমুখি করালেন, আমরা ফলাফলটা কাউকে বলতেও পারছি না।

এর আগে গত ২৬ মে বাংলা বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল অনেকবেশি পার্থক্য।  

ফলাফলের তারতম্য:

স্নাতকের ফলাফলে যেখানে সিজিপিএ ৩.৫০ পেয়েছিলেন ৫ জন, সেখানে স্নাতকোত্তরে পেয়েছেন মাত্র ১ জন। স্নাতকের সিজিপিএ ৩.২৫ পেয়েছিলেন ৫০ জন, স্নাতকোত্তরে পেয়েছেন ৪ জন। স্নাতকের ফলাফলে সিজিপিএ ৩.০০ পেয়েছিলেন ৫২ জন, সেখানে স্নাতকোত্তরে পেয়েছেন ৩৫ জন। স্নাতকের ফলাফলে যেখানে সিজিপিএ ৩.০০ এর নিচে পেয়েছিলেন ৯ জন, সেখানে স্নাতকোত্তরে পেয়েছেন ৬৩ জন।

শিক্ষার্থীদের দাবি- উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফলাফল বিপর্যয় ঘটিয়েছেন শিক্ষকরা। তাই ফল প্রকাশের পরদিনই বিবৃতি দিয়ে তা বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।

এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।